Icon to view photos in full screen

“প্রত্যেকেরই প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এটা আমরা দেখতে পাই, অন্যেরা পায় না। এটাই একমাত্র যা পার্থক্য"

খুজামা’য় স্থানীয় গ্রাউন্ডের কাছে ভিকেনগুনু ফাতিমা কেরার খুব সংক্ষিপ্ত ডাক-ঠিকানা। নাগাল্যান্ডের কোহিমা জেলার অন্তর্ভুক্ত তার যে গ্রাম, সেখানের ৫০০০ জন বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই তাকে প্রতিবন্ধী-অধিকার-কর্মী হিসেবে জানে। কিন্তু বাকি ভারতে খুব কম লোকই তার গল্প শুনেছে।

হোসাল এবং হোভিনিলে কেরার ১০ সন্তানের একজন ভিকেনগুনু (৪২) ১৮ মাস বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হয়েছিলেন; এটি তার পা কৃশকায় এবং এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে অক্ষম করে দেয়। তিনি বলেন, তার পরিবারের ‘অপরিসীম সমর্থন’ তাকে ১৯৯৮ সালে খুজামায় উচ্চবিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করতে সাহায্য করেছিল, কিন্তু জখামার সেন্ট জোসেফ কলেজের একটি বাস নেওয়া ছিল অন্য গল্প। "কিছু সময় এটি খুবই হতাশাজনক এবং যন্ত্রণাদায়ক হত।" এমনকি ২০০৬ সালে তিনি তার বি.এ শেষ করার আগে আলমা ম্যাটারে সহকারী লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। কলেজগামী ভাইপো এবং ভাইঝির সঙ্গে তিনি জখামায় থাকতেন।

২০০৭ সালে ভিকেনগুনুর বাবা স্ট্রোকে মারা যান। ভিকেনগুনু কাজ চালিয়ে যান এবং পাশাপাশি ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ পাশ করেন। মায়ের সঙ্গে থাকার জন্য তিনি ২০১৪ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরিবার তার এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করলেও সমাজ কিন্তু তা করেনি। লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, "একজন প্রতিবন্ধী হিসেবে আপনি কিভাবে অন্য চাকরি পাবেন?" তাদের এই সংশয় ভুল প্রমাণ করার জন্য তাকে তাড়িত করেছিল।

"২০১৪ সালটি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় যখন আমি আমার বিকলত্ব স্বীকার করে নিই।" তিনি খুজামায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন। এম.এ করার পর তিনি যে টেইলারিং ক্লাস ‘শুধুমাত্র শখ হিসেবে’ নিয়েছিলেন সেটিই এখন তার নতুন পেশার ভিত্তি হয়ে উঠেছে। তিনি তার কারিগরিতে কারুশিল্পও যোগ করেছেন। একটি বৈদ্যুতিক সেলাই মেশিন কেনার পর এবং একটি সার্টিফিকেট কোর্সের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করার পর তার টেইলারিং ব্যবসা বৃদ্ধি পায়। এমনকি যখন তিনি ২০১৮ সালে দিমাপুরে মুক্তহস্ত হোম রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে ভোকেশনাল উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করার জন্য চলে আসেন, তখনও তিনি তার বাড়ির ভাড়া দিতে থাকেন, যা তিনি ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ফেরত দেন।

ভিকেনগুনু তার শিল্পকর্ম এবং ‘দৃষ্টান্তমূলক সমাজ সেবা’-এর জন্য রাজ্যের মাইকিফেস্ট পুরস্কার ২০২০-২১ জিতেছেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি অসংখ্য প্রশিক্ষণ এবং নেতৃত্ব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন যা তাকে প্রতিবন্ধী সক্রিয়তার মধ্যে বদ্ধমূল করেছে। তিনি সেই মহিলা যিনি ২০১৮ সাল থেকে নাগাল্যান্ড রাজ্য প্রতিবন্ধী ফোরামের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি বলেন, "আমি যখন অন্য প্রতিবন্ধীদের সমস্যাগুলি সমাধান করি তখন সেগুলি আমাকে নিজের হতাশা মোকাবিলায় সাহায্য করে"।

অবসর সময়ে ভিকেনগুনু বাগান প্রতিপালন করতে ভালোবাসেন— তিনি সবজির তালিকা গড়গড় করে বলে যান— মটর, আলু, মটরশুটি, লাউ, লঙ্কা, কুমড়া এবং শসা! একটি পারিবারিক ঐতিহ্যও রয়েছে যা তাকে নিশ্চিন্তে থাকতে সাহায্য করে: "প্রতি রাতে যখন বেশ ঠান্ডা নামে, আমরা আগুন জ্বালাই এবং গোটা পরিবার জড়ো হয়ে আমাদের দিনটি কীভাবে গেল সেই বিষয়ে হাসিমজার সঙ্গে গল্প করি।

ছবি:

ভিকি রয়