Icon to view photos in full screen

" যা গেছে সেদিকে নজর না দিয়ে আমাদের উচিত যা আছে তাকে গুরুত্ব দেওয়া। "

২০০০ সাল। ১৭ বছরের ভল্লিনয়াগম তার দেশের বাড়ি ভীরানারায়না মঙ্গলমে গরমের ছুটি কাটাচ্ছে। ওর বাবা যার জমিতে ভাগচাষ করেন , সেই জমির মালিক কচি ডাব খাবার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। কিশোর ভল্লিনয়াগম উৎসাহের বশে নারকোল গাছে চড়ে এবং ভারসাম্য রাখতে না পেরে পা পিছলে সোজা জমিতে আছড়ে পড়ে। এরপর ওর জীবনটা আর আগের মতো থাকে না।

ভল্লির বাবা ভাগভানর দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। তিনি ভল্লিকে গ্রামীন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। বড় হাসপাতালে নিয়ে যাবার ক্ষমতা তার ছিল না। সেখানে ভল্লি খুবই সামান্য চিকিৎসা পায়। কিন্তু আর কোনোরকম সহায়তা, এমনকী, নিম্নাঙ্গে এই আঘাতের ফলে যে ভল্লির রেচকতন্ত্রে প্রদাহ( ইউরিনারি ইনফেকশন) হতে পারে বা দীর্ঘদিন শুয়ে থাকলে পিঠে কোমরে ঘা ( বেডসোর) হতে পারে, এরকম প্রাথমিক কথাগুলোও হাসপাতাল থেকে বলে দেওয়া হয় না ওদের। ২০০৩ সালে ছ ইঞ্চি গভীর ঘা (বেডসোর)  হয় ভল্লির। চেন্নাইয়ের এক হাসপাতালে বড়সড় অস্ত্রপচার করা হয়। নব্বইটি সেলাই পড়ে, এতটাই গভীর ছিল সেই ঘা।
 
সব কিছু ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করল ভল্লিনয়াগম। সে শুরু করল দর্জির কাজ এবং জামাকাপড় ইস্তিরি করতে। ২০০৬ সালে একটা অটোরিকশা কেনে ভল্লি। প্রয়োজনমতো পরিমার্জন করে নেয় তাতে। হাতের ব্রেক লাগিয়ে নেয়, নিজের বসার সুবিধেজনক সিট লাগিয়ে নেয়। এরপর ২০০৯ সালে একটা ছোট্ট দোকান খুলে বসল ভল্লি। প্রথম প্রথম এই দোকানে কেবল মোবাইল ফোন রিচার্জ করত সে। পরে লোন নিয়ে একটা কম্পিউটার কেনে। তখন ওর দোকানটাই ভীরানারায়না মঙ্গলম গ্রাম এবং আশপাশের আরো কিছু গ্রামের একমাত্র অনলাইন সারভিস সেন্টার হয়ে দাঁড়ায়। 

সিপা (SIPA -- Spinal Injured Persons Association) নামক একটা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয় ভল্লিনয়াগম। এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে নিজের অটোরিকশা নিয়ে তিনটি জেলার বিভিন্ন মফস্বলে, গ্রামে ঘুরে বেড়ায় সে, যোগ দেয় নানান অনুষ্ঠানে। ৫ই সেপ্টেম্বর স্পাইনাল কর্ড ইঞ্জুরি ডে হিসেবে চিহ্নিত। সেই দিন শিরদাঁড়ায় আঘাতপ্রাপ্ত মানুষজনের কাছে দল বেধে গিয়ে মানসিক ভাবে তাদের উজ্জীবিত করার কাজ করে ভল্লিনয়াগম। এই অতিমারীর সময়ে, ভল্লির অটোরিকশা প্রাণ বাঁচানোর কাজে ব্রতী হয়েছে। অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে 
পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জায়গামতো পৌঁছনো, সবই করছে সে। 

ইউটিউবে শিক্ষামূলক ভিডিও দেখে এবং পড়ে নিজেকে সুশিক্ষিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভল্লি। একটা পোলট্রিও খুলেছে সে। আশপাশের বাড়িতে ডিমের যোগান দেয়। সবুজ-যোদ্ধা জি.নম্মলভর (G. Nammalvar) কে আদর্শ হিসেবে মানে ভল্লি। তার প্রবল ইচ্ছে সেও জৈব চাষ করবে এবং কেবলমাত্র প্রাকৃতিক খাবারই খাবে। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভল্লিনয়াগম অ্যালোপ্যাথি ওষুধ খায় না। তার মতে, " খাদ্য নিজেই ওষুধের কাজ করে। " ভল্লির চিরকালের পছন্দের খাবার, পান্তা ভাত আর পেঁয়াজের আচার! 

ছবি:

ভিকি রয়