Icon to view photos in full screen

" আমরা বড় করে ভাবতে চাই যাতে বড় রকমের পরিবর্তন আসে। "

গুয়াহাটির শিশু  সারথী নামক এনজিও তে সিলসিলা দাসের (৩৭) ছবি নেবার জন্য পৌঁছন ফটোগ্রাফার ভিকি রয়। কিন্তু কোনোভাবেই সিলসিলার একক ছবি তোলার সুযোগ পান না তিনি। কারণ, দুই প্রিয় বন্ধু, সিমি কলিতা (৩৪) এবং রুণু মেধির( ৩৫) সঙ্গ ছাড়া এক মুহূর্তও থাকে না সিলসিলা।
 
বিজয়িনী নেটওয়ার্ক ফর ওম্যান উইথ ডিসেবিলিটি ( Bijoyini Network for Women with Disability) নামক অ-লাভজনক ( এনজিও) সংস্থার সমন্বয়কারী ব্যক্তি হিসেবে কাজ করে সিলসিলা। আড়াই বছর বয়েসে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয় সে। ন বছর বয়েসে স্কুলে ভর্তি হয়ে বিশ্রী রকম বৈষম্যের শিকার হয় সিলসিলা। তার সঙ্গে কেউ বন্ধুত্ব করত না কারণ তাদের মায়েরা বারণ করে দিয়েছিল। তাদের ধারণা ছিল, সিলসিলার সঙ্গে মিশলে ওদেরও পোলিও হবে। এত অবহেলা সত্ত্বেও আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিল সিলসিলা। এর প্রধান কারণ ওর বাবা যিনি ছিলেন একজন চা বিক্রেতা। বছর দশেক আগে তিনি মারা যান। সিলসিলা তার প্রিয় বাবার উৎসাহ দেওয়া কথাগুলোর স্মৃতিচারণ করছিল। তিনি বলতেন, " ভবিষ্যৎ কীভাবে মজবুত করা যায় সেই নিয়ে আমাদের এখন ভাবা উচিত। " এখন যখন সিলসিলা তার পরিবারকে প্রতিপালন করছে তখন অনুভব করে বাবার আশা নিশ্চয়ই সে পূরণ করতে পেরেছে। 
 
বিজয়িনী নেটওয়ার্ক সংগঠনের সহকারী সমন্বয়কারী ব্যক্তি হিসেবে কাজ করে রুণু। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জন্ম হয়েছিল তার এবং তার যমজ বোনের। কিন্তু দুঃখের বিষয়ে সেই যমজ বোন জন্মের পরেই মারা যায়। রুণু বেঁচে গেলেও সেরিব্রাল পলসি রোগে আক্রান্ত হয়। চলাফেরা আর কথা বলা, দুটোই ভীষণরকম বাধাপ্রাপ্ত হয়। রুণুর বাবা ছিলেন সরকারি কর্মচারী। সব রকম উপায়ে তিনি চেষ্টা করেছিলেন মেয়ের চিকিৎসা করাতে। বাড়িতে ফিসিওথেরাপির আয়োজনও করেছিলেন। রুণুর তুতো বোন সিমিও সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত। ২০১৬ সালে যখন শিশু সারথী যাত্রা শুরু করে, সেই সময় সিলসিলার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় রুণু এবং সিমির। শিশু সারথী সংস্থা বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের লেখাপড়া, পুনর্বাসন এবং তাদের প্রয়োজনীয় দাবী নিয়ে কাজ করে থাকে।
 
ওদের তিনজনের বন্ধুত্বের ব্যাপারে জিগ্যেস করতেই সিলসিলা স্বতঃস্ফূর্তভাবে গেয়ে ওঠে শোলের সেই সর্বকালীন জনপ্রিয় গান, " ইয়ে দোস্তি হাম নহি তোড়েঙ্গে " গানটি। মহম্মদ রফি, লতা মঙ্গেসকর আর সুনিধি চৌহান ওর প্রিয় গায়ক গায়িকা। তিন বন্ধু মিলে গল্প করতে, গান গাইতে আর নাটক দেখতে ভালোবাসে।
 
ওরা একসঙ্গে বেড়াতে যেতেও খুব পছন্দ করে। ওদের প্রত্যেকের মধ্যেই শিল্পীসত্তা আছে। সেই সুবাদে ওরা কলকাতা, দিল্লি, আগরা এবং জয়পুরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। ছবির জন্য রুণু, জাপানী ফুল সাজানোর পদ্ধতি ইকেবানার জন্য সিমি পুরস্কারও পেয়েছে। সিলসিলা আর রুণু কাজের জন্য শিলং, তেজপুর, বক্সা ঘুরেছে। সিমি আর রুণু দার্জিলিং-এ শীতকালীন ক্যাম্পে যোগ দিয়েছে। ২০২০ তে কলম্বোতে আটটি দেশের প্রতিনিধি হয়ে বক্তব্য রেখেছিল রুণু। সেটাই ছিল তার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। সেই আনন্দের স্মৃতি ওর মনের মণিকোঠায় সঞ্চিত রয়েছে। 
 
রাজনীতিতে আসতে চায় সিলসিলা যাতে এই অক্ষমতাসম্পন্ন মানুষগুলোর হয়ে জোর গলায় কথা বলতে পারে এবং সমাজে একটা বদল আনতে পারে। মুখে হাসি আর , with laughter on their lips and dreams in their eyes.

ছবি:

ভিকি রয়