Icon to view photos in full screen

"যখন আমি গান করি, তখন সঙ্গীত আমাকে সুস্থ করে তোলে এবং আমাকে জীবনের আধ্যাত্মিক দিক দেখতে সাহায্য করে।"

হরিয়ানার গুরুগ্রাম জেলার সোহনার রামোতার (৩৬) তার সর্বশেষ সেটের মাটির জলের পাত্র তৈরি করা শেষ করেছেন এবং সেগুলি শুকানোর জন্য রেখে গেছেন। তার স্ত্রী সোনিয়া (২৭) তাদের মহিষের পরিচর্যা করছেন। এখন রামোতারের বিশ্রাম নেওয়ার সময়— যেমন: হুক্কা খাওয়া বা হারমোনিয়াম বাজানো।

রামোতার দুই বছর বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও, তার বাবা মঙ্গল সিং চেয়েছিলেন যে ছেলে এই কুমোরের (কুম্ভকার) ঐতিহ্য চালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে শিক্ষিত হোক এবং একটি ভালো চাকরি পাক। কিন্তু পড়াশোনা তাকে আকর্ষণ করেনি। তিনি যখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়েন, সিং অনিচ্ছাপূর্বক তাকে মাটির পাত্র তৈরি করা শিখিয়েছিলেন। আর এই শিক্ষাই আজ তার জীবিকা।

মেওয়াট জেলার নুহ তহসিলের মালব গ্রামে মঙ্গল সিং এবং মূর্তি দেবীর ছয় সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন রামোতার। গোষ্ঠীর সামাজিক দ্বন্দ্ব পরিবারটিকে অন্য স্থানে সরে যেতে বাধ্য করেছিল, তাই তারা সোহনায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। রামোতারের নায়ক তার বাবা, একজন বলিষ্ঠ মানুষ, যিনি ৮৬ বছরে প্রকৃতির নিয়মে মারা যান এবং সারা জীবনে কখনও তার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করার প্রয়োজন হয়নি। তিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন—কুস্তি করতেন ও লাঠি খেলতেন এবং রামোতারকে তবলা আর গান শিখিয়েছিলেন (পরে তিনি হারমোনিয়ামও শিখেছিলেন)।

যখন ১৫ বছরের রামোতারের পেশি পুরোপুরি দুর্বল হয়ে পড়ে—সম্ভবত পোস্ট-পোলিও সিনড্রোমের জন্য, যা প্রাথমিক আক্রমণের কয়েক বছর পরে বেঁচে থাকা ব্যক্তির উপর প্রভাব ফেলে—সিং প্রায়ই তাকে একটি পরিচিত ভজনের লাইন বলতেন, “হারিয়ে না হিম্মত, বিসারিয়ে না রাম’’ (কখনো সাহস হারিও না, ঈশ্বরকে ভুলে যেও না)। একটি সুপারিশ তাদেরকে দিল্লির সেন্ট স্টিফেন হাসপাতালের ডাঃ ম্যাথিউ ভার্গিসের কাছে নিয়ে আসে। রামোতার তাকে মানবরূপে দেবদূত মনে করেন। তার করা অপারেশন রামোতারকে ওয়াকার ব্যবহার করে চলাফেরা করতে সক্ষম করে।

সিংয়ের বাবার অকাল মৃত্যুর পর তিনি তার ভাইবোনদের দেখাশুনা করতেন এবং তিনি তাদের জীবনে স্থায়িত্ব এনেছিলেন। একইভাবে সিং মারা যাওয়ার পর, যেহেতু তার বড় ছেলে একটি ইট ভাটার ব্যবসা শুরু করার জন্য পরিবার ছেড়ে চলে গিয়েছিল, রামোতার তার ছোট ভাইবোনদের জন্য বাবার জায়গাটা নিয়েছিলেন, যেমন-তিনি তাদের চাকরি পেতে এবং বিয়েতে সহজ করেছিলেন। আর তার নিজের বিয়ের কি হবে? তার কাকীর স্বামী তাকে সোনিয়ার পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি তার সরল এবং স্পষ্ট প্রতিশ্রুতিতে মুগ্ধ হয়েছিলেন: “আমার অবস্থা যাই হোক না কেন, তোমাকে খুশি রাখতে আমি প্রাণপণ চেষ্টা করব।” তাছাড়া, তিনি একটি প্রাইভেট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কমিশন পাচ্ছিলেন যা তাকে একটি ‘বিকলাঙ্গদের স্কুটার’ কেনার জন্য ঋণ দিয়েছিল।

কোম্পানিটিকে অর্থ পাচারের জন্য তদন্ত করা হয়েছিল এবং তাই এটি বন্ধ হয়ে যায়। রামোতার চরম দুর্দশার মধ্যে পরেন যখন তার আয় একদম কমে গিয়েছিল, কিন্তু সোনিয়া বুদ্ধিমানের মতো তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “যেহেতু আপনি মৃৎশিল্পে এত দক্ষ, কেন এটাকেই আপনার নতুন পেশা করছেন না?’’ এবং তিনি এটাই করলেন। নভজ্যোতি ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন থেকে এই কাজে দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি এখন মাটির জিনিস, যেমন- জলের পাত্র, দিয়া (বাতি), কুলহার (জেল্লাহীন চায়ের কাপ), ছিলম (তামাক পানের জন্য হুক্কার নীচে থাকা বাটি) এবং মাটির ব্যাঙ্ক (পিগি ব্যাঙ্ক) তৈরি করেন।

সঙ্গীত তার নেশা। তিনি এমন একটি দলের সঙ্গে যুক্ত যাদের নিয়মিতভাবে ধর্মীয় উৎসবে সারা রাতের সমাবেশে ভজন গাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। একজন যত্নশীল স্ত্রী এবং হাসিখুশি তিন সন্তান যাদের তিনি গভীরভাবে ভালোবাসেন, তাদের জন্য রামোতার বলেন, “আমার পরিবারই আমার জগত।”


ছবি:

ভিকি রয়