গত সপ্তাহে আমরা চণ্ডীগড়ে রক্তিমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারা জানালেন যে দীপাবলির জন্য সে ঘর সাজাতে ব্যস্ত—রঙিন কাগজের কাটআউট ঝুলিয়ে। কলেজে সে একটি দিয়া বানানোর প্রতিযোগিতায়ও অংশ নিয়েছিল। রক্তিমা (১৯), যে বধির-মুক, অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় সবসময় শিল্পকলার প্রতিই বেশি আকৃষ্ট ছিল। তাছাড়া, তার বাবা সন্তোষ কুমার, যিনি ভারতীয় বায়ুসেনায় কর্মরত তিনি বলেন যে স্কুলে সে পড়ত, সেখানে সে কেবল মুখস্থ করত এবং “কপি-পেস্ট” করত, অর্থ না বুঝেইl এবং ভারতীয় সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ (আইএসএল) শেখা তার জন্য দৃষ্টির সঙ্গে বোঝার ফাঁকটিকে পূরণ করেছে এবং তার ও তার পরিবারের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
বড় দুঃখের বিষয়, রক্তিমা তার বাবা-মাকে স্কুলে সে কী কী সহ্য করছিল তা জানাতে পারেনি! অষ্টম শ্রেণির পর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সে চাইত না, আর কেন চাইত না সেটা সে বোঝাতেই পারত না। কেবল সম্প্রতি, আইএসএল তাদের জীবনে আসার পর, সন্তোষ ও তার স্ত্রী রূপা সিং জানতে পারেন যে শিক্ষকরা তার সঙ্গে রূঢ় ব্যবহার করতেন এবং তাকে ক্লাসের বাইরে দাঁড় করিয়ে শাস্তি দিতেন—এমনকি তারা বারবার বলতেন যে তাকে চাপ না দিতে এবং “সে যদি ৪০ শতাংশও পায় আমাদের কোনো আপত্তি নেই”।
বধির সন্তানের বাবা-মায়ের সাধারণ প্রবৃত্তি হলো তাদেরকে শ্রবণক্ষম সমাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া: কথা বলতে শেখাতে হবে, আর যদি সেটা না হয়, তাহলে ককলিয়ার ইমপ্লান্ট করতে হবে যাতে তারা ‘স্বাভাবিক’ স্কুলে পড়তে পারে। সন্তোষ ও রূপাও এই পথই অনুসরণ করেছিলেন। রক্তিমা যখন এক বছর বয়সী, একদিন রূপা লক্ষ করলেন যে তার পাশে ভারী কিছু পড়ে গেলেও ঘুমন্ত শিশুটি চমকে ওঠেনি। তিনি তাকে আরও মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করলেন এবং সন্তোষকে বললেন যে তিনি সন্দেহ করছেন তাদের মেয়ে শুনতে পাচ্ছে না। প্রথমে সন্তোষ তার কথায় গুরুত্ব দেননি, কিন্তু পরে তিনিও লক্ষ করতে শুরু করেন। তিনি যখন তার পাশে গ্লাস ফেলতেন বা টিভির আওয়াজ বাড়াতেন, তখনও শিশুটি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাত না। দেড় বছর বয়সে ডাক্তার তাদের বললেন বেরা টেস্ট—ব্রেইনস্টেম ইভোকড রেসপন্স অডিওমেট্রি—করাতে।
রক্তিমার বধিরতা নিশ্চিত হওয়ার পর দম্পতি সরকার পরিচালিত এডিআইপি প্রকল্পের আওতায় ককলিয়ার ইমপ্লান্টের জন্য আবেদন করেন—যা প্রতিবন্ধীদের সহায়ক সামগ্রী ক্রয় ও ফিটিংয়ের জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়। এদিকে রক্তিমা নিজের মতো করে একটি সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করেছিল, যার মাধ্যমে সে বাবা-মা, বড় ভাই সিদ্ধার্থ রঞ্জন, ছোট বোন নভপ্রিত ও দাদি সরস্বতী দেবীর সঙ্গে কথা বলত। তাকে কথা বলানোর সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়।
সন্তোষের বদলি হয় অমলা থেকে দিল্লিতে, যেখানে তিনি এয়ার ফোর্স রেকর্ডস অফিসে পোস্টেড হন। তিনি ককলিয়ার ইমপ্লান্টের জন্য পুনরায় আবেদন করেন এবং তা মঞ্জুর হতে বহু বছর অপেক্ষা করতে হয়। রক্তিমাকে হিয়ারিং এইড দেওয়া হয় এবং দিল্লির আর্মি হাসপাতাল ও পরে পুনের কমান্ড হাসপাতালে মোট ছয় বছরের স্পিচ থেরাপি করানো হয়, তারপর আর্মি হাসপাতালেই ইমপ্লান্ট দেওয়া হয়। “কিন্তু তখন তার বয়স ১২, আর মানুষের মস্তিষ্কের বেশিরভাগ বিকাশ ছয় বছরেই সম্পূর্ণ হয়ে যায়,” বলেন সন্তোষ। তাই শব্দ শুনতে পারলেও তার বোঝার ক্ষমতা পিছিয়ে ছিল। ডাক্তার যে ‘মেইনস্ট্রিম’ স্কুলে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা কোনো সমাধান ছিল না।
এই বছরের মার্চে রক্তিমা ফাইন আর্টসে ডিপ্লোমা করার পাশাপাশি আইএসএল শেখা শুরু করে। এতে তার জীবনে বিরাট পরিবর্তন আসে। এখন সে অন্যদের সঙ্গে অর্থপূর্ণভাবে যোগাযোগ করতে পারছে বলে ভীষণ খুশি; তার শিক্ষকরা বলেন দুই বছরের মধ্যেই সে অসাধারণ অগ্রগতি করবে। রূপাও একই ক্লাসে আইএসএল শিখছেন এবং বাড়ি ফিরে বাকিদের শেখাচ্ছেন। “আগে সে কিছু বলতে না পারলে রেগে যেত, কিন্তু এখন তার ভাবনা শেয়ার করতে পারছে এবং খুশি,” বলেন রূপা। “আমি তাকে সত্যিকারের চিনতে পারছি। সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের জন্য যেন আমি আমার মেয়েকে আবার খুঁজে পেয়েছি।”
নভপ্রিত নবম শ্রেণিতে পড়ে, সিদ্ধার্থ কানপুরে কমার্শিয়াল পাইলট হওয়ার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এবং রক্তিমা ফাইন আর্টসে স্নাতক করতে চায়। সন্তোষ গর্বের সঙ্গে বলেন যে প্যারা যোগা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে রক্তিমা চণ্ডীগড়ে স্বর্ণপদক জিতেছে এবং দেশের শীর্ষ আটের মধ্যে স্থান পেয়েছে! তিনি জানান কীভাবে তার নাম রেখেছেন: “ও জন্মানোর পর কর্নেল গাঙ্গুলি বলেছিলেন আপনার মেয়ে এত সুন্দর, দেখতে একদম রত্নের মতো। তাই তার নাম রাখলাম রক্তিমা।”
দম্পতির একমাত্র লক্ষ্য হলো সে যেন আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হয় এবং নিজের সব প্রয়োজন মেটাতে পারে। আর ভালোবাসা ও সমর্থন অব্যাহত থাকলে এই রত্ন ভবিষ্যতে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।