Icon to view photos in full screen

"আমার পরিবার প্রতি বছর আমার জন্মদিন খুব ধুমধাম করে পালন করে। সম্প্রতি আমি একটি স্কুল পিকনিকেও গিয়েছিলাম"

“আমার ছেলে যদি আর পাঁচটা বাচ্চার মতো 'স্বাভাবিক' হত, তাহলে হয়তো লোকেরা ওকে ততটা পাত্তা দিত না। কিন্তু এখন তারা নিজেরাই ওর কাছে আসে, ওর সঙ্গে কথা বলে।” বলছিলেন রাঘবের গর্বিত মা আশি ওয়াধাওয়া (৫২)। তাঁর ছোট ছেলে, এখন ৩১ বছর বয়সি রাঘব, জন্ম থেকেই সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত। কিন্তু আশি এবং তাঁর স্বামী হরিশ, প্রথমদিকে বুঝতে পারেননি যে রাঘব এক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। যদিও ডাক্তার তাঁদের এই কথাটা শিশুটির জন্মের পরেই জানিয়ে দিয়েছিলেন।
“ও খুব সুন্দর, ফুটফুটে একটা বাচ্চা ছিল। এমনকি জন্মের সময় যে কোনও অন্য সাধারণ শিশুর মতোই ও কেঁদেছিল,” তিনি বলেন। ছেলে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছিল, তখনও তাঁরা বিশ্বাস করতেন সে একদম সুস্থ স্বাভাবিকই আছে। কিন্তু যখন দেখা গেল তিন বছর বয়সেও রাঘব হাঁটতে গেলে বেশ বেগ পাচ্ছে, তখন অমৃতসরের এই দম্পতি সমস্যাটার গুরুত্ব বুঝলেন। তাই তাঁরা ছেলেকে পায়ের জন্য একটা ধনুর্বন্ধনী এবং একটি ওয়াকার যন্ত্রের ব্যবস্থা করে দিলেন। তাতেও দেখা গেল সে হাঁটতে পারছে না। কিন্তু আশি তাকে হাঁটার জন্য জোর করতে চাননি। মন সায় দেয়নি তাঁর। এই দম্পতি বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে গিয়ে যোগব্যয়ামসহ নানারকম চিকিৎসাপদ্ধতির সাহায্য নিয়ে ছেলেকে সুস্থ করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, কিন্তু কোনও উন্নতি হয়নি।
রাঘব একটি সাধারণ স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু তার পক্ষে সেখানে মানিয়ে নেওয়া খুব কঠিন ছিল কারণ সে নিজে নিজে কিছু করতে পারত না, সবসময়েই কারও না কারও সাহায্যের প্রয়োজন ছিল তার। তাই তার স্নেহশীল বাবা-মা বাড়িতেই একজন গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু সেটাও বেশি দিন স্থায়ী হল না। ফলস্বরূপ, তার সেভাবে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ হয়নি। কিন্তু আশির মতে রাঘব খুবই খুব তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন এবং নিজেকে প্রকাশ করতে সক্ষম। তিনি গর্ব করে বলেন যে রাঘব গড়গড় করে নামতা মুখস্থ বলতে পারে।  
তবে কাউকে কখনও হাল ছাড়তে নেই। আশিরও আগোশ হেল্পিং হ্যান্ডস-এর মনিন্দর জিতের সঙ্গে দেখা হয়ে গেছিল। সেটা ২০১৮ সালের কথা। যখন তিনি সেখানকার বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছিলেন, তখন তাঁর কথানুযায়ী "সেখানে এমন অনেক সুন্দর, ফুটফুটে শিশুকে দেখি যারা সম্ভবত রাঘবের চেয়েও বেশি কষ্টের মধ্যে ছিল।" নিঃস্বার্থভাবে এইসব শিশুদের দেখভাল করার জন্য তিনি মনিন্দর ম্যাডামের কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁর মতে তাঁদের ছেলে রাঘব যেন একজন রাজপুত্রের মতো, কারণ এত লোক সেখানে তার যত্ন নেয়! " ঈশ্বরের অসীম দয়া, যে ওর সমস্ত প্রয়োজন মেটানোর জন্য চারপাশে এমন মানুষজন রয়েছেন।"
এমন নয় যে তিনি রাঘবের দেখভালের ব্যাপারে কখনও কোনও রকম শৈথিল্য দেখিয়েছিলেন। রাঘব যখন ছোট ছিল, তখন তিনি তার সমস্ত কিছুই নিজে হাতে করিয়ে দিতেন: দাঁত ব্রাশ করা থেকে তাকে স্নান করানো, পোশাক পরানো, খাওয়ানো ইত্যাদি সব কিছুই। কিন্তু এখন, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার ওজন বেড়েছে। তাই এখন হরিশও কিছুক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করেন। এমনকি তার ঠাকুমা রমন ওয়াধাওয়াও (৭৮) কোনও কিছু লাগতে পারে এই ভেবে নাতির আশেপাশেই থাকেন।
রাঘব এখন নিয়মিত আগোশে যাচ্ছে। সকালে ধীরেসুস্থে ঘুম থেকে উঠে দুপুরের দিকে অটোতে করে ওই কেন্দ্রে যায় সে। ৪টের মধ্যে কাজ সেরে সে সাড়ে চারটের মধ্যে বাড়ি ফিরে আসে। কেন্দ্রটি যদিও সকাল ১০টায় খোলে, রাঘব তার হুইলচেয়ারে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারে না; তাই তার জন্য সময়ে একটু ছাড় দেওয়া আছে। আগোশ কেন্দ্রে, বাচ্চাদের যোগব্যায়াম, গান, নাচ, ছবি আঁকা ইত্যাদি শেখানো হয়। রাঘব তো এখন এমনকি বর্ষপূর্তি দিবসের অনুষ্ঠানেও মঞ্চে উঠে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে।
বাড়িতে থাকলে সে হয় টিভি দেখে অথবা তার ট্যাবে কিছু ব্রাউজ করে। মা-ছেলে কখনও সখনও পার্কে বেড়াতে যায়। ১৭ই সেপ্টেম্বর, ধুমধাম করে তার জন্মদিন উদযাপন করা হয়। সেদিন তারা হয় বেড়াতে যায় অথবা কোনও একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া সারে।
কেন্দ্র থেকেও তাদেরকে চড়ুইভাতি করতে নিয়ে যায়; গত বছর নববর্ষের প্রাক্কালে তারা এমন একবার গেছিল। সম্প্রতি তারা লোহরি উৎসব উদযাপন করেছে। "মনিন্দর ম্যাডাম বলেছেন যে এইসব বাচ্চাদের কখনওই অবহেলা করা উচিত নয়। বাকিরা যা যা করে তাদেরও সেসব অভিজ্ঞতা দেওয়া উচিত," আশির বক্তব্য।
রাঘবের পছন্দ? কোল্ড কফি এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। আশি জানালেন, সে সবকিছু ঠিকঠাক করে গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করে। তাঁর নাতি, জার্মানি প্রবাসী রাঘবের বড় দাদা অক্ষয়ের তিন বছরের ছেলে কবীরও নাকি সবসময় তার এই বিশেষ কাকাটির জন্য উদ্বিগ্ন থাকে, খোঁজখবর নেয়।

ছবি:

ভিকি রয়