Icon to view photos in full screen

"কেউ অথবা কোনকিছুই আমাকে পরাস্ত করতে পারবে না।"

দিল্লির সরকারি স্কুলে পড়াকালীন আঁকাঝোকাই হয়ে উঠেছিল নিয়াজের নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র অবলম্বন। দু বছর বয়েসে পোলিওতে আক্রান্ত হবার ফলে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে সে। এই দৈহিক অক্ষমতা বন্ধুহীন করে তোলে নিয়াজকে। সহপাঠীরা তাকে খেলায় নিত না, অবহেলা করত। ক্লাস ঘরের শেষ বেঞ্চে বসে নিজের মনে শিক্ষকদের প্রতিকৃতি এঁকে নিজেই অবাক হয়ে যেত নিয়াজ। মা-ই ছিলেন ওর জীবনের সবথেকে বড় অবলম্বন। তিনি নিয়াজকে বুঝিয়েছিলেন, তাঁর অবর্তমানে নিজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। " নিজেই নিজের অবলম্বন হও।" বলেছিলেন তিনি। "খুদ কা সাহারা বনো। "
 
নিয়াজ যেহেতু পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে বড় ( ওরা তিন ভাই,  দুই বোন), ওর মনে হয়েছিল সংসারের হাল ওকেই ধরতে হবে। স্কুলের পরে সে ওখলা সব্জি বাজারে সব্জি বেচতে শুরু করেছিল। বাড়তি সময়ে আশপাশের কর্মচারীদের মডেল বানিয়ে তাদের প্রতিকৃতি আঁকত। লোকজনের নজরে পড়ে যেতেই তারা পরামর্শ দিল, সবজি বেচে সময় নষ্ট না করে নিয়াজের উচিত আঁকা নিয়ে এগনো।
 
স্কুল ছাড়ার চার বছর বাদে ২০১৫ সালে নিয়াজ সিদ্ধান্ত নেয় জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইন আর্টস- এর প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসবে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় এখানকার খরচ অর্ধেকেরও কম হওয়াতে এই বিশ্ববিদ্যালয়কেই বেছে নেয় সে। নিজের ক্ষমতায় প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকে নিয়াজ কারণ  কোচিং নেওয়ার মতো টাকা ছিল না ওর কাছে। চার বছরের এই কোর্স যথেষ্ট কঠিন ছিল। তাছাড়া সরঞ্জাম যা লাগত তাও খুবই দামী। সে কারণে নিয়াজ পুনর্ব্যবহৃত ( রিসাইকল্ড) জিনিসপত্র এবং পেন্সিলের বদলে পেন ব্যবহার করত। বিভিন্ন আঁকার প্রতিযোগিতায় পাওয়া অর্থ সে নিজের শিক্ষার পেছনে ব্যয় করত। 
 
যে নিয়াজ সামান্যতম অর্থের বিনিময়ে ২০১১ সালে তার প্রথম ছবি বিক্রি করেছিল, আজকে সে এমন একজন পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী যার পাঁচশোরও বেশি ছবি বিক্রি হয়েছে এবং বহু মূর্তি বসেছে বিভিন্ন জায়গায়। সারা রাত জেগে নিয়াজ ছবি আঁকে আর দিনের বেলা ঘুমোয়। " আমার শিল্পই আমার জীবন। " নিয়াজ বলে। " আমি যখন শিল্প সৃষ্টি করি, তার ভেতর নিজেকে হারিয়ে ফেলি। " ২০২০ সালে ছোটবেলার বন্ধু মিনু কে বিয়ে করেছে নিয়াজ। লড়ে যাচ্ছে জীবনে স্থায়িত্ব আনতে কিন্তু বাজারি শিল্পের কাজে কখনই সে পা বাড়াবে না, যেখানে তার নিজস্ব শৈল্পিক সত্ত্বা বজায় থাকবে না। " আমার ছবি মানুষের অনুভূতি আবেগকে ফুটিয়ে তোলে এবং গল্প বলে।" নিয়াজে বলে। " আমি বুড়ো হতে পারি কিন্তু আমার শিল্প কখনই তা হবে না। " 

ছবি:

ভিকি রয়