Icon to view photos in full screen

" যতক্ষণ তুমি চেষ্টা চালিয়ে যাবে, সফল হবার একটা সুযোগ থেকেই যায়। "

মানুষের শরীর এবং তার ক্রিয়াকলাপ নিয়ে পড়ার স্বপ্ন ছিল নিন্সি মিরিয়ম মন্ডলির। কিন্তু ২০১৪ সালে সেই প্যারামেডিক্যাল কোর্স করাকালীন ওর শরীরটা নিয়েই অপারেশন থিয়েটারের জোরালো আলোর নীচে কাটাছেঁড়া করে অন্যেরা। অনেকটা উঁচু থেকে পড়ে গিয়ে মেরুদন্ডে গুরুতর আঘাতে লেগে প্যারাপ্লেজিয়ার( Paraplegia) শিকার হয় নিন্সি। প্রায় এক বছর হাসপাতালে বন্দী অবস্থায় কাটাতে হয় ওকে। বিগত সাত বছর হুইলচেয়ারকে সঙ্গী করেই ঘোরাফেরা চলে নিন্সির।
 
কেরালার তিরুবনন্থপুরম জেলার ২৬ বছরের নিন্সির কথায়, " পড়ে যাওয়া আমার জীবনে দু রকম প্রভাব ফেলেছে। একটা তো প্রচন্ড ভয়, আর একটা হল পরিবর্তন। " পরিবার আর বন্ধুদের ভালোবাসা এবং সহযোগিতা ওকে আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছে। মানুষ এবং পরিস্থিতির মাধ্যমে ঈশ্বর ওর মঙ্গল করেছেন, এমনটাই বিশ্বাস করে নিন্সি। ছবি আঁকা বিশেষ ভাবে এই পরিস্থিতি থেকে ওকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেছে। শখের থেকেও বেশি সঙ্গী হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছে ওর ছবি আঁকা।
 
হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে নিন্সি দেখে, বাবা ওর ওঠার জন্য বাড়ির সামনে টালি দিয়ে ঢাল ( Ramp) তৈরি করিয়ে রেখেছেন আর মা বাড়ির অন্দরসজ্জা এমনভাবে করেছেন যাতে হুইলচেয়ার নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে নিন্সির বিন্দুমাত্র অসুবিধে না হয়। এসব সত্বেও বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগের অসুবিধে থেকে যায় অনেকটাই। দূরবর্তী শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সাইকোলজি নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে নিন্সি। এরপর কাউন্সেলিং ও ফ্যামিলি থেরাপি ( Counselling and Family therapy) নিয়ে স্নাতকোত্তর করে ও। সাইকোলজি নিয়ে পড়ার ফলে নিজের মানসিক আবেগকে বশে রাখতে সক্ষম হয় নিন্সি। মানসিক শক্তির ক্ষমতা কতটা, সেই উপলব্ধিও হয় ওর। " তোমার মন যদি শক্তিশালী হয়, তোমার শরীরকেও সে জাগিয়ে তুলবে।" নিন্সি বলে।
 
পাল্লিয়াম ইন্ডিয়া ( Pallium India) আয়োজিত বাৎসরিক আঁকার অনুষ্ঠানে নিয়মিত ভাবে যোগ দেয় নিন্সি। রাজ্যের রাজধানীতে যেন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীরা বাধাহীনভাবে ঘোরাফেরা করতে পারে, সেই সচেতনতা বাড়াতেই এই উদ্যোগ। হুইলচেয়ার ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করাও আর একটা উদ্দেশ্য এই আর্ট ক্যাম্পের। 
 
২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ফ্রিডম আর্ট এক্সিবিশন ( Freedom Art Exhibition) নিন্সির জীবনের প্রথম মঞ্চ যেখানে ওর আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয়। সেই প্রদর্শনীর শিরোনাম ছিল " অক্ষমতা নয়, আমার সক্ষমতা দেখাতে চাই। " অন্তরের আবেগ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল সেই ছবিগুলোতে। "আমার ছবি কেবল আমার হয়ে কথা বলে না, আমাকেও কিছু বলে।" 
 
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নিন্সি ব্লুমব্লুম- এ-র সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এটা একটা সহযোগী বিশ্ববিদ্যালয় ( University for collaborative education) যেখানে ৬ থেকে ১৮ বছর বয়েসী ছেলেমেয়েদেরকে সুযোগ দেওয়া হয় তাদের নিজের নিজের পছন্দ বুঝে নেবার। ব্লুমব্লুম-এর তৈরি করা শিক্ষাদানের পদ্ধতি অনুসরণ করে নিজস্ব শিক্ষায়তন গড়ে ছাত্রছাত্রী তৈরি করার স্বপ্ন দেখে নিন্সি। 

নিন্সি মায়ের হাতে তৈরি খাবার খেতেই ভালোবাসে যদিও দুর্ঘটনার পর থেকে তার স্বাদ গন্ধের অনুভূতি চলে গেছে। পরিবারের সঙ্গে হাসি মজায় কাটানো সময়ই ওর জীবনে খুশি আর আনন্দ বয়ে আনে। " আজ আমি যা কিছু পেয়েছি, যে ভালোবাসার মধ্যে আছি তার জন্য আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ।"  

ছবি:

ভিকি রয়