Icon to view photos in full screen

“আমি বিস্ময়ে ভাবি, যদি আমি তাঁতের কাজ না শিখতাম তাহলে কী যে করতাম !’’

প্রত্যন্ত ভারতীয় গ্রামগুলি, যেখানে চিকিৎসা-ব্যবস্থা নেই, আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ একধরণের উচ্চ-জ্বরও চিকিৎসার অভাবে সর্বনাশা পরিণাম ঘটাতে পারে। মণিপুরের থুয়াংতমে এটাই নিয়াংগাইনেমের (৩২) শ্রবণশক্তি এবং তার বাবা জীবন কেড়ে নিয়েছিল।
 
           গ্রাম-প্রধানের ধানের জমিতে কাজ করা ভাড়াটে কৃষক মিস্টার থং জাডং এবং স্ত্রী জিন খানচিঙয়ের মেয়ে নাগাইনেম, পাঁচ বোনের মধ্যে সবার বড়। যখন তিনি বধির হয়ে যান তখন তার বয়স এক বছর। পরিবেশ ও অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য তার যথাযথ শিক্ষাও বাদ যায়। এমনকী তার বোনেরা কোনোক্রমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে। নাগাইনেম মিস্টার ডং-এর সঙ্গে মাঠে যেতেন এবং ২০০৬ সালে যখন ডং মারা যান আর মিসেস চিং একা অত্যন্ত পরিশ্রম করছেন তখন নাগাইনেমকে বোনেদের দেখাশোনা করতে হয়েছিল। তার মনে পড়েছিল— “বাবা আমাকে খুব ভালোবাসত আর কখনো আমায় বকত না”, দোভাষী সঙ্গীর মাধ্যমে তিনি বলছিলেন।
 
           নাগাইনেম তাঁতের কাজ শিখতে আগ্রহী ছিল। ২০১৫ সালে মণিপুরের চুরাচাঁদপুরে একটি এনজিও সেন্টার ফর কমিউনিটি ইনিশিয়েটিভ (সিসিআই), আন্তর্জাতিক সংস্থা ক্রিস্টোফেল ব্লাইডেন মিশন (সিবিএম) দ্বারা সমর্থিত তাদের কমিউনিটির ভিত্তিতে রিহ্যাবিলিটেশন কর্মসূচীর আওতায় তাকে চিহ্নিত করে এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কারিগরিতে মাস্টার্সের জন্য তার নাম নথিভুক্ত করেছিল।
 
           ২০১৬ সালটি নাগাইনেমের জন্য কি যে ছিল! ব্যক্তিগত হানির সঙ্গেই ব্যক্তিগত কৃতিও আসে। সিসিআই যখন তাদের মালসওম এবিলিটি রিসোর্স সেন্টারে তাঁত, সাইন ভাষা, বার্তালাপ দক্ষতা, গণিত, স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিকীকরণ এবং খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল তখন তিনি প্রকৃত শিক্ষার স্বাদ প্রথমবার পান।
 
           মাত্র দুই মাসে তিনি এমন দক্ষ তাঁতি হয়ে ওঠেন যে সিসিআই তাকে উপার্জনের জন্য একটি হস্তচালিত তাঁত দেয়। এরপরে আরও ছয়মাস তার দক্ষতায় ধার এলে এবং তাকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাহায্য করার পর সিসিআই তাকে একটি ভাড়াটে তাঁত দিয়েছিল যাতে তার বোনেরা মনপ্রাণ লাগিয়ে এই কাজ করে।
 
           মানসিক চাপ ও অসুস্থতায় জর্জরিত মায়ের আত্মহত্যার খবর পেয়ে নাগাইনেম নিজের বাড়িতে ফিরতে প্রস্তুত হচ্ছিলেন। থুয়াংতমে ফিরে যাওয়ার আর কোনও কারণ ছিল না তার। আজ তিনি তার বোন নিয়াংগলিয়ান কিমের (কিম) সঙ্গে বাংমুয়ালে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তাদের বিবাহিত দুই বোন পাশের গ্রামে এবং ছোটজন ভুংগাইলিয়ান, তাদের মামার সঙ্গে থাকে।
 
           এক সপ্তাহে নাগাইনেম দুটি পুয়ানটেনস (মহিলাদের জন্য চিরাচরিত হাতে তৈরি বহির্বাস) বোনেন, যেগুলি তিনি একটি স্থানীয় দোকানে বিক্রি করেন। মুদির জিনিসপত্র এবং ভাড়ার জন্য তিনি যথেষ্ট উপার্জন করেন। কিম দ্বিতীয় তাঁতে বোনার কাজ করে যার জন্য সে ভাড়া দেয়। নাগাইনেম বলেন, “মানুষের সঙ্গে মিশতে আমি আনন্দ পাই। কিন্তু তাদের সঙ্গে বার্তালাপ একটি চ্যালেঞ্জ কারণ, তারা সাইন ভাষা জানে না।”

ছবি:

ভিকি রয়