Icon to view photos in full screen

"সময়ই শ্রেষ্ঠ ওষুধ"

ভাবুন, আপনি ভারতের হয়ে পদক জয়ী একজন ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন। একটি বড় খেলার ঠিক আগে, একটি অস্ত্রোপচার আপনাকে চেস্ট ডাউন প্যারালাইসিসে নিয়ে গেল। মোহম্মদ শামস আলম শেখ (৩৫) একই অন্ধকারময় সুড়ঙ্গে প্রবেশ করেছিলেন যা আপনি এইমাত্র কল্পনা করলেন, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তিনি আবারও সাঁতারের চ্যাম্পিয়ন হিসাবে পদক জিতে সুরঙ্গের অন্য প্রান্ত থেকে বেরিয়েছেন। 

শামসের জন্ম বিহারের মধুবনী জেলার রাঠোস গ্রামে। আট সদস্যের পরিবারে, তার বাবা মোহম্মদ নাসির - যিনি মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন, ছিলেন সবচেয়ে উচ্চ শিক্ষিত। মুম্বাইয়ের বাইকুল্লায় ছয় বছর বয়সে শামস স্কুলে ভর্তি হন, যেখানে তার বড় দুই ভাই চামড়ার পণ্যের ব্যবসা চালাতেন। তিনি একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা এবং পরে বি.ই. করেছিলেন।

শামস বরাবরই খেলাধুলাপ্রিয় ছিলেন। মুম্বাইতে তিনি কালারিপায়াত্তু মার্শাল আর্ট শিখতে চেয়েছিলেন কিন্তু তাকে শেখাবে এমন কাউকে পাননি। তিনি তার ঠাকুরদার মতো একজন কুস্তিগীর হতে চেয়েছিলেন এবং অবশেষে ক্যারাটেতেই থিতু হন। এতে তিনি শ্রেষ্ঠ হয়েছেন, ব্ল্যাক বেল্ট জিতেছেন এবং রাষ্ট্রীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ৫০টিরও বেশি পদক অর্জন করেছেন।

২০১০-এশিয়ান গেমসের জন্য তিনি যখন প্রস্তুত হচ্ছিলেন, তার পিঠে টিউমার ধরা পড়ে। পরামর্শদাতা আশাবাদী ডাক্তার বলেছিলেন: "আপনার একটি অস্ত্রোপচারের দরকার, তবে খেলতে পারার জন্য আপনি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন।" শামসের মনে আছে: “আমি ডাক্তারের কথা বিশ্বাস করেছিলাম। সর্বশক্তিমানে আমার যেমন বিশ্বাস আছে তার প্রতিও আমার একই বিশ্বাস ছিল।’’ কিন্তু অস্ত্রোপচার ভালো হয়নি এবং তিনি প্যারাপ্লেজিয়ায় আক্রান্ত হলেন।

দুই বছর ধরে তিনি চরম নৈরাশ্য ও হতাশায় ভোগেন। ক্যারাটে দল, কলেজের বন্ধুরা এবং তার পরিবার, বিশেষ করে বোন আর মা (যিনি মারা গেছেন) তার দৃঢ় সমর্থক ছিল। প্যারাপ্লেজিক ফাউন্ডেশনে একটি পুনর্বাসন বৈঠকের সময় তিনি দুইজন স্বনামধন্য প্যারা-স্পোর্টসম্যানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন: রাজারাম ঘাগ, যিনি ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়েছিলেন এবং সত্যপ্রকাশ তিওয়ারি - একজন ব্যাডমিন্টন ও টিটি খেলোয়াড়। এই সাক্ষাৎ তার চোখ খুলে দিল সম্ভাবনার দিকে। যতই হোক, খেলাধুলা তার রক্তেই ছিল।

ক্যারাটে স্ট্রাইকস থেকে শুরু করে সাঁতারের স্ট্রোকস— শামস প্যারাপ্লেজিক হয়েই সমুদ্রে দীর্ঘতম দূরত্ব অতিক্রম করে সাঁতারের বিশ্ব রেকর্ড ভাঙ্গার পাশাপাশি অসংখ্য প্রশংসা জিতেছেন। তবে এই ট্রফি আর প্যারালিম্পিকের স্বপ্নই তার একমাত্র ধ্যান নয়। একজন অনুপ্রেরণামূলক বক্তা হিসাবে তিনি পিডব্লিউডি-দের প্রবেশযোগ্যতার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ান। তিনি মুম্বাইতে জেলা পর্যায়ের প্যারাস্পোর্টস সমিতি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ইউনিভার্সিটি অফ টেনেসি-এর সহযোগিতায় ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট দ্বারা আয়োজিত গ্লোবাল স্পোর্টস মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম ২০১৮-এর জন্য তাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। খেলাধুলার মাধ্যমে ভারতের প্রবেশযোগ্যতা তৈরিতে তিনি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন।

২০১৯ সালে হরিয়ানার গুরুগ্রামে চলে যাওয়ার পর শামস সঠিক মূল্যের কাস্টমাইজড হুইলচেয়ার তৈরির জন্য একটি কোম্পানির সঙ্গে কাজ শুরু করেন। তিনি বাবার সঙ্গে থাকেন, যিনি প্রায় ৯০ বছর বয়সি হলেও যোগব্যায়াম করেন, সুস্থ থাকার লড়াই করছেন এবং তাকে তার ফিজিও ব্যায়াম করতে সাহায্য করেন।

ছবি:

ভিকি রয়