Icon to view photos in full screen

" শারীরিক অক্ষমতা মানুষের মানিয়ে নেবার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। "

চন্ডীগড়ের ৪৭ বছর বয়েসী মেজর দেবেন্দ্র প্রসাদ সিং এক অপ্রতিরোধ্য মানসিকতার মানুষ। যে সমস্ত অবসরপ্রাপ্ত সেনা তাঁদের জীবনে আসা বাধা অনায়াসে অতিক্রম করেছেন, তাঁদেরকে নিয়ে ভিডিওর সিরিজ তৈরি করেছেন মেজর সিং। সেগুলো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দেখা যায়। এই সিরিজের নাম ' নেভার সে ডাই ' ( Never Say Die) । এটা এমন একটা বাক্য যার থেকে হার না মানার মনোভাবের আঁচ পাওয়া যায়। 'গ্রিট' নামক গ্রাফিক নভেলে ডিপি -র( এই নামেই পরিচিত মেজর ) কাহিনি বলা আছে। ইনিই হচ্ছেন ভারতের প্রথম ব্লেড রানার ( নকল পা নিয়ে দৌড়য় যারা) এবং প্রথম শারীরিক ভাবে অক্ষম একক স্কাই ডাইভার ( গ্লাইডারের সাহায্যে শূন্যে ভাসা)।  
 
ডিপির জন্ম ১৩ই জানুয়ারি। কিন্তু স্কুলে ভর্তির সুবিধের জন্য ওঁর অভিভাবকরা সেটা ১৩ই সেপ্টেম্বর করে দিয়েছিলেন। ১৫ই জুলাই দিনটাতে ডিপি আরও একটা জন্মদিন উদযাপন করেন কারণ এই দিন তিনি কার্গিলের যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছিলেন। বোমা ফেটে মারাত্মক আহত হয়েছিলেন তিনি। একজন ডাক্তারবাবু তাঁকে মৃত ঘোষণা করলেও আর একজন ডাক্তারবাবু তাঁকে বাঁচিয়ে তোলেন। বোমের ভেতরে থাকা ধারালো পেরেক ডিপির শরীরের আভ্যন্তরীণ অঙ্গের ক্ষতি করে এবং হাড় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। ডান পা হাঁটুর নীচ থেকে কেটে বাদ দিতে হয় তাঁর। অভূতপূর্ব মানসিক জোরের সহায়তায় ১০ বছরের ভেতর ডিপি কেবল নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াননি, রীতিমতো দৌড়চ্ছেন।
২০০৯ সালে ডিপি ছিলেন এক পায়ে দৌড়নো প্রথম হাফ ম্যারাথন দৌড়বাজ। ভালো পা দিয়ে লাফিয়ে তারপর আহত পাটিকে টেনে জায়গায় নিয়ে গিয়ে দৌড়েছেন তিনি। ২০১১ সালে নকল পা লাগানোর পর ভালোভাবে দৌড়তে পারেন ডিপি। ও-ই বছরই একটা এনজিও শুরু করেন তিনি। নাম দেন, দ্য চ্যালেঞ্জিং ওয়ান্স ( The Challenging Ones - TCO)। অঙ্গহানি হয়েছে এমন মানুষেরা যাতে তাঁর সঙ্গে দৌড়তে পারেন সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এই এনজিও-র পথ চলা শুরু হয়। আজ পর্যন্ত ২৬ টা হাফ ম্যারাথনে দৌড়েছেন ডিপি এবং TCOর পরিবারের সদস্য সংখ্যা এখন ১৬০০।
 
সেনা বাহিনির বন্ধুরা মজা করে এই ডিপি নামটা দিয়েছে ইংরেজিতে যার মানে করেছে ' ড্রিল পারপাস ' ( DP-- Drill Purpose)। যে সমস্ত বন্দুক খারাপ হয়ে যায় সেগুলো প্রশিক্ষনের সময়ে কাজে লাগানো হয়। কারণ ওগুলো দিয়ে যুদ্ধের কাজ চলে না। কিন্তু ডিপি প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, তিনি কেবলমাত্র ঘর সাজানোর সামগ্রী নন। তিনি ঠাট্টা করে বলেন, " ডিপি যদি এই খেল দেখাতে পারে তাহলে সচল বন্দুক ম্যাজিক করতে পারে।" নিজের যোগ্যতার কারণে বহু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি কিন্তু তা সত্বেও নিজের লক্ষে অবিচল আছেন; আশা এবং সদর্থক ভাবনা প্রচার করে চলা, আরো ভালো মানুষ হিসেবে উন্নীত হওয়া, এগুলোকে পাথেয় করেই এগোচ্ছেন তিনি। মানুষকে উজ্জীবিত করতে প্রায়শই শিখ সম্প্রদায়ের পবিত্র গ্রন্থ ' গুরবানি ' র মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরেন ডিপিঃ মন জিতে, জগ জিতে। অর্থাৎ, নিজের মনকে জয় করতে পারলে জগৎ জয় করতে পারবে। 

ছবি:

ভিকি রয়