যোধপুরের ড. কুসুমলতা ভাণ্ডারী যখন বুলবার পোলিওতে আক্রান্ত হন—যা সাড়ে তিন বছর বয়সে তার ঘাড়ে পক্ষাঘাত সৃষ্টি করে, তখন অনেকে তার বাবা-মাকে বলেছিলেন যে তিনি মারা গেলেই ভালো। কুসুমের বাবা ছিলেন একজন চিকিৎসক, তিনি এবং তার স্ত্রী সীতা তাদের সন্তানকে সারা দেশের হাসপাতালগুলিতে বিভিন্ন চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। মুম্বাইয়ের মহালক্ষ্মীর এসআরসিসি চিলড্রেনস হাসপাতালের একজন ডাক্তারের কাছ থেকে শ্রেষ্ঠ পরামর্শটি এসেছিল : “ওর মধ্যে যা আছে সেটায় মনোযোগ দিন : একটি সক্রিয় মন।”
সীতা কুসুমকে আত্মনির্ভরশীল করার দিকে ঝুঁকেছিলেন। কুসুমের হাতের সীমিত চলাচলকে সেলাই ও অন্যান্য গৃহস্থালির কাজ করাতে সক্ষম করিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় নিছক সুযোগের মাধ্যমে। তার বড় ভাইয়ের একজন গৃহশিক্ষক ছিল। যেহেতু সীতা ১১ বছরের কুসুমের যত্নে ব্যস্ত ছিলেন এবং বড় ভাই নিজের তিন বছরের বোনের দেখাশোনা করতে ব্যস্ত ছিল সেইজন্য পড়াশোনায় ভাই পিছিয়ে পড়েছিল। কুসুম তার ভাইয়ের পাঠে আগ্রহী ছিলেন এবং শিক্ষককে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতেন। তিনি কুসুমকে প্রথম গ্রেডের পাঠ্যক্রমের সঙ্গে পরিচিত করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
তিনি একজন দ্রুত শিক্ষানবিশ ছিলেন। মাত্র তিন বছরের মধ্যে তিনি দশম গ্রেডের পরীক্ষায় বসার জন্য প্রস্তুত ছিলেন, এই অভিজ্ঞতা তিনি এত ভালোভাবে উপভোগ করেছিলেন যে— “এটি একটি সিনেমায় যাওয়ার মতো ছিল।” তিনি প্রথম প্রচেষ্টায় উত্তীর্ণ হয়ে তার শিক্ষকের ভবিষ্যদ্বাণী সঠিকভাবে প্রমাণ করেছিলেন। মহিলা কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ করার জন্য একটি কো-এড কলেজ বেছে নেন, যেখানে প্রথমবার তিনি ছেলেদের সঙ্গে মেলামেশা করেন। আলাপী ও প্রাণবন্ত কুসুমলতা তার ক্লাসে শীর্ষস্থান অধিকার করেন এবং স্বর্ণপদকসহ এমএ পাশ করেন।
মেয়ে পড়াচ্ছে— এই দৃশ্য সীতা ছবির মতো কল্পনা করেছিলেন এবং যখনই এই বিষয়ে তার স্বামী সন্দেহ প্রকাশ করতেন তখন তিনি পাল্টা জবাব দিতেন, “যদি কেউ ওকে অধ্যাপিকা হিসেবে না নিযুক্ত করে তবে আমি ওর জন্য একটি কলেজ খুলব।” যদিও তাকে অতদূর যেতে হয়নি। ড. কুসুমলতা পিএইচডি করার পর যোধপুরের জয়নারায়ণ ব্যাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রিয় ও সম্মানিত অধ্যাপিকা পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন।
যখন কুসুম বুঝতে পারলেন যে ক্যাম্পাসে অনেক প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রী বই, ফী বা থাকার জায়গার খরচ বহন করতে পারে না, তখন তিনি তার সহকর্মী ও বন্ধুদের নেটওয়ার্কে প্রবেশ করেন। তাদের মধ্যে একজন তার বৃহৎ বাসভবনের দুটি ঘর, একটি রান্নাঘর এবং গ্যারেজ ধার দিয়েছিল। অন্যরা বাসন, তোশক দান করেছিল এবং গ্যাস ও বিদ্যুতের জন্য খরচ দিয়েছিল। সেই ছিল প্রজ্ঞা নিকেতনের জন্ম। আর বর্তমানে এই ছাত্রাবাস ১০০ জন দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী এবং শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করে যেখানে বিনামূল্যে বোর্ড ও সহায়ক ডিভাইস সরবরাহ করে।
ড. কুসুমলতা তার ছাত্রী ও সহচর ড. নির্মলা বিশনয়ের সঙ্গে থাকেন এবং বাগান করা ও মোটরচালিত বৈদ্যুতিক সেলাই মেশিনে সেলাই করা উপভোগ করেন।
একজন অক্লান্ত কর্মী হিসেবে তিনি রাজস্থানের প্রতিবন্ধীর জন্য পথ-ভাঙ্গা পরিবর্তন করেছেন; যেমন- যোধপুরের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ফী মকুব, সরকারি কর্মচারীদের জন্য হোম জেলা পোস্টিং এবং ডাকের মাধ্যমে ভোটদান পর্বের ব্যবস্থা করা।