কিলুমো ইজুং (৩৪) যখন তার পুরনো কালো মোটরবাইক নিয়ে কোহিমা, নাগাল্যান্ডের একটি ব্যস্ত রাস্তায় বেরোন তখন তাকে নিশ্চিত হতে হয় যেন বাইকের পশ্চাৎ-দৃশ্যপট দেখানো আয়নাগুলি পুরোপুরি কাজ করে৷ সেগুলি ছাড়া তিনি জানতে পারবে না, তাকে পেরিয়ে যেতে আগ্রহী কেউ অধৈর্য হয়ে মোটরের হর্ন দিচ্ছে কিন
সরকারের সর্বশিক্ষা অভিযান কর্মসূচির অধীনে ভারতীয় সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের (ISL) প্রশিক্ষক কিলুমো’র গভীর আসক্তি দুই ক্ষেত্রে— ফুটবল এবং বাইক চালানো। নাগাল্যান্ডের প্রথম প্রত্যয়িত আইএসএল দোভাষী রুওকুখরিনুও ভিজোথার মাধ্যমে আমরা তার সঙ্গে কথা বলেছি। ডক্টর টিএম লোথা, যিনি প্রাক্তন বিধায়ক ও মন্ত্রী এবং মাহালো ইজুং, যিনি এনজিও চ্যারিটি ক্লাব বহু-উপলক্ষ সমিতির জন্য কাজ করেন— তাদের সাত সন্তানের মধ্যে পঞ্চম সন্তান কিলুমো, এক বছর বয়সে কানের ভিতরে ফোঁড়া ফেটে যাওয়ায় নিজের শ্রবণশক্তি হারান। তার বয়স যখন তিন বছর, কিলুমো’র বাবা-মা গুয়াহাটির ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডাঃ এন.এন. দত্তের কাছে যান, যিনি তাদের একজন স্থানীয় বাক্-বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠান। কিলুমোর থেরাপির জন্য মাহালো গুয়াহাটিতে দুই বছরের জন্য একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়েছিলেন।
যদিও কিলুমো আংশিকভাবে তার মাতৃভাষা লোথা বলতে পারেন, তবুও প্রধানত আইএসএল - যা তিনি ডেফ বাইবেল মিনিস্ট্রি, ডিমাপুরে শিখেছিলেন - তার মাধ্যমেই কথাবার্তা বলেন। ছোট ভাই চোনচিও এবং ইয়ানসাথুং দুজনেই সাইন ভাষা শিখেছে। শিলং-এর ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট এবং ট্রেনিং সেন্টারে হাই স্কুলের পর তিনি ফেরানডো স্পিচ এবং হিয়ারিং সেন্টারে পড়ান এবং পরে ইন্দোর বধির দ্বিভাষিক একাডেমিতে দুই বছরের ডিপ্লোমা ইন টিচিং আইএসএল (ডিটিআইএসএল) কোর্স সম্পন্ন করেন।
"আমি মোটা হয়ে গেছি কিন্তু এখনও ফুটবল খেলি," হাসিমুখে কিলুমো বলেছিল। ১৬ বছর বয়সে টিভিতে দেখার পর তিনি ফুটবলের প্রতি আকৃষ্ট হন - তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থক এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর "আজীবন ভক্ত"। তার জীবনের সুখ-স্মৃতি: ব্যাঙ্ককে ফিফা গ্লোবাল ইউনিফাইড কাপ ২০১৩-এর যোগ্য ম্যাচে ভারতের প্রতিনিধিত্বকারী চার বধির এবং সাতজন শ্রবণকারী খেলোয়াড়ের বিশেষ অলিম্পিক নাগাল্যান্ড দলে বিখ্যাত গোলকিপার সুব্রত পালের সঙ্গে খেলা। আরেকটি হল- ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ দ্য ডেফ-এর বার্ষিক সম্মেলনের জন্য তার অস্ট্রেলিয়া সফরের স্মৃতি।
২০২০ সালের মার্চ মাসে বাবার মৃত্যু তার কাছে এক তীব্র আঘাত ছিল, সেইসঙ্গে কোভিড-19-এ লকডাউনের প্রকোপ - সবমিলে সঙ্গলিপ্সু, ঘুরেফিরে বেড়ানো মানুষটিকে ঘর-বন্দী করে দিল। মহামারীর আগে তিনি বধির, বধির শিশুদের বাবা-মা এবং বিশেষ শিক্ষাবিদ সহ একটি মিলিত গ্রুপকে বাড়ি থেকে আইএসএল শিখিয়েছিলেন। তিনি চেষ্টা করেছিলেন, তারপর জুমের মাধ্যমে শেখানো ছেড়ে দিয়েছিলেন, কারণ হাতের অঙ্গভঙ্গিতে সামান্য পরিবর্তনও আলাদা অর্থ প্রকাশ করতে পার
কিলুমো তার বাইক মেরামতিতে ("আমি এটাকে একটি স্ক্র্যাম্বলারে পরিবর্তিত করতে চাই"), ওখার ডোয়াং নদীতে মাছ ধরতে (“সেখানে আপনি সত্যিই বড় মাছ পাবেন") এবং বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যেতে আনন্দ পান। ইউরোপ তার ইচ্ছে-তালিকায় রয়েছে: "জুভেন্টাস, চেলসি বা রিয়াল মাদ্রিদের মতো একটি বড় ক্লাবে লাইভ খেলা দেখাটা আমার স্বপ্ন!"