Icon to view photos in full screen

“আপনার জীবনে কিছু ঘটার জন্য বসে থেকে অপেক্ষা করবেন না। দায়িত্ব নিন। নিশ্চিত করুন যে আপনি কারও উপর নির্ভরশীল না।”

যখন বিকলাঙ্গ মানুষেরা (PwDs) শোনায় যে কীভাবে তারা বিকলাঙ্গ হয়েছিল, তাদের সেই গল্পগুলি প্রায়শই শোনা কথা এবং স্মৃতিতে ভরা হয়। দিল্লিতে জন্মানো কবিতা মাথুর-কে (৪৫) বলা হয়েছিল যে, একদিন তার বয়স যখন দুই বছর, তার মা তাড়াহুড়ো করে মাঠে কাজে নামার আগে তাকে তাড়াতাড়ি স্নান করিয়ে একটি নিম গাছের নীচে খেলতে রেখে গিয়েছিলেন। যেহেতু তার গা পুরোপুরি শুকায়নি সেজন্য ওই রাতে তার খুব জ্বর আসে, আর তাই তার পক্ষাঘাত এবং পোলিও হয়ে যায়! বিজ্ঞান আমাদের উল্টে বলে: এটা পোলিওভাইরাস ছিল যারজন্য জ্বর ও পক্ষাঘাত হয়েছিল।

তার পরিবার তাকে গ্রামের এক 'বৈদ' (আয়ুর্বেদ চিকিত্সক)-এর কাছে নিয়ে যায় যার চিকিৎসা তাকে হাঁটতে শুরু করতে সাহায্য করেছিল। তার বাঁ হাত ও ডান পা দুর্বলই থেকে যায় এবং মেরুদণ্ডের একটি বাঁকের জন্য পিঠে কুঁজ পড়ে, যা তার শরীরের ভারসাম্যের ক্ষতি করে। কবিতা তার মায়ের অভাব ভীষণরকম অনুভব করেন, যিনি কবিতার দ্বিতীয় শ্রেণীতে থাকাকালীনই মারা যান, আর তার মনে পড়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে মায়ের মালিশ করে দেওয়ার কথা। তার পরিবার তাকে অতিরিক্ত নিরাপত্তায় রাখত। স্কুলে যাওয়ার সময় দিদি গীতা তার ব্যাগ নিয়ে যেতেন। তার স্কুলে অনুরোধ করা হয়েছিল তাকে যেন শেষ ক্লাসের ১৫ মিনিট আগেই বের হতে দেওয়া হয়, যাতে বাচ্চারা বাড়িতে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে তাকে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে ফেলে দিতে না পারে। তার বাবা প্রতাপ সিং একজন বাস কন্ডাক্টর ছিলেন এবং কাজে ব্যস্ত থাকতেন, তাই গীতা এবং তাদের দাদি হুকুম কৌর দেবী তার যত্ন নিতেন। তার দাদির মৃত্যুর তেরো বছর পরে, কবিতা এখনও তার দাদির অভাব অনুভব করেন— তার প্রাণোচ্ছল কথাবার্তা এবং যেভাবে তিনি মজা এবং মিলেমিশে ভাগ করে নেওয়ার পরিবেশে পরিবারকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছিলেন।

স্কুল শেষ করার পর, কবিতা সোনপাটের টিকা রাম পি.জি. গার্লস কলেজে ভর্তি হন। নিজের খোলস থেকে প্রথমবারের মতো বেরিয়ে আসতে কবিতা তার পরিবারকে তাকে হোস্টেলে থাকতে দিতে রাজি করান। তার নতুন খুঁজে পাওয়া এই স্বাধীনতা তাকে কলেজ শেষ করার পর চাকরির জন্য আবেদন করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। তাকে সেলাই শিক্ষিকা হিসাবে এক বছরের চুক্তিতে নিয়োগ করা হয়েছিল কিন্তু ব্যবস্থাপনার একজন সদস্য তার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং চাকরিটি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। তিনি বাড়িতে টিউশনি করে উপার্জন করতেন এবং তারপরে স্বাস্থ্য-ছাড়-কার্ড বিক্রির টেলি-কলার হিসাবে চাকরি পান। যাইহোক, চাকরিটি তার মূল্যবোধের সঙ্গে মিলত না; তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে তিনি গ্রাহকদের প্রতারণা করছেন, কারণ তাদের যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তারা সেটা পাচ্ছিলেন না। তাই তিনি চাকরি ছেড়ে দেন এবং সরকার পরিচালিত শিল্প প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে যোগ দেন যেখানে তিনি এখনও পর্যন্ত কাজ করেন। সব বয়সের মেয়েদের সেলাই ক্লাস নেওয়ার জন্য তিনি প্রতিদিন বাসে ১৩ কিমি পথ যাতায়াত করেন।

কবিতার ছাত্রীরা তাকে উজ্জীবিত করে। তিনি তাদের প্রশংসার নোট এবং রুমাল এমনকি নিজের জন্য তাদের তৈরি করা পোশাক উপহার পেতেও পছন্দ করেন। ‘জীবনকে আরও অর্থবহ করে তুলতে’ তিনি ড. কিরণ বেদী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নবজ্যোতি ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের বাল গুরুকুলের একজন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক। তার জীবনকে বিশেষত্বে ভরিয়ে তুলেছে তার পোষা কুকুর ডলার, যে তাকে সঙ্গ দেয় এবং তার কাছে পরিবারের চেয়েও বেশি।

ছবি:

ভিকি রয়