Icon to view photos in full screen

“আমি বিশ্বাস করি প্রতিটা কষ্টে-জর্জরিত মানুষের জীবনে একটি অলৌকিক মোড় অপেক্ষা করে, যে মুহূর্তে তারা বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলে।”

৩রা ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে (পিডব্লিউডি) ফাথিমা পিভি’র জন্ম এবং নিয়তি-নির্ধারিত ছিল তাই সে একজন প্রতিবন্ধীর প্রেমেই পড়ে! ফাথিমার স্বামী হলেন কেরালার মালাপ্পুরামের জেসফার পি কোট্টাক্কুন্নু (৩৫) ঘাড়ের পক্ষাঘাতগ্রস্ত একজন পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী যিনি চিবুকের সাহায্যে চালানো একটি কাস্টমাইজড ইলেকট্রিক হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিজের আঁকা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের প্রতিকৃতি তাঁর হাতে তুলে দেন। তার আঁকা দুবাইয়ের শাসক ও তার পুত্র ক্রাউন প্রিন্সের ১৫ বর্গফুটের তৈলচিত্র রাজকীয় প্রাসাদের দেওয়ালে টাঙ্গানো রয়েছে। তার শিল্পকর্ম কেরালা, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু এবং সিঙ্গাপুর জুড়ে প্রদর্শিত হয়েছে। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ওয়ার্ল্ড আর্ট দুবাই তার ১৫টি চিত্রকর্ম প্রদর্শন করেছিল।
           পাঁচ বছর বয়স থেকে জেসফারের পেশী-ক্ষয়ের লক্ষণগুলি প্রকাশ পায় এবং পঞ্চম শ্রেণীতে উঠতেই তিনি আর হাঁটতে পারতেন না। তার শরীরের ওপরের পেশীগুলিও দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ১৫ বছর বয়সে তিনি আর তার ডায়েরিতে লিখতে বা ‘জঙ্গলবুক’ থেকে কার্টুন-চরিত্র আঁকতে পারতেন না। আয়ুর্বেদ এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সাময়িকভাবে আশা জাগালেও পরে তা পুরোপুরি ঘুচে যায়। তার মনে পড়ে, ‘আমি আসলে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছিলাম। এমনকী সেই তারিখও ভেবে রাখি।’
           তারিখ পেরিয়ে গেল। ‘আপনি যখন হতাশার চরম সীমায় পৌঁছান তখন একটি অত্যাশ্চর্য মুহূর্ত আসে, যখন স্বয়ং ঈশ্বরই আপনাকে পথ দেখান।’ তিনি মুখ দিয়ে আঁকতে শুরু করলেন। ঠোঁটের মাঝে একটি রবারযুক্ত পেন্সিল ধরলেন। ‘আমি যখন রবার ব্যবহার করতাম তখন পেন্সিলের ডগা আমার গালের ভিতরটা ফুঁড়ে দিত আর রক্ত বেরত। মুখের এত কাছে পৃষ্ঠা হওয়ায় চোখ ব্যথা করবে, তবু আমি চালিয়ে গেলাম।’ অধ্যবসায় এবং অনুশীলনের মাধ্যমে তিনি নিজের দক্ষতা বাড়ালেন। তিনি জল-রঙ ও আরকাইলিকে স্নাতক হন (তৈলচিত্র শুধু প্রতিকৃতির জন্য)।
           জেসফার নিজেকে শিল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। অ্যাক্টিভিস্ট রইস হিদায়া এবং অন্যান্যদের সঙ্গে তিনি গ্রীন প্যালিয়েটিভ নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন, যা পঙ্গুত্ব এবং সামাজিক ও পরিবেশগত উদ্বেগের সমাধান করে। ওমানে বেড়ে ওঠা মালায়ালি ফাথিমা গ্রীন প্যালিয়েটিভের সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে জেসফারের পোস্টের জবাব দিতেন। দু’জনে শিল্প, কবিতা এবং জীবন নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন। তারা আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে, ফোনে দীর্ঘ কথোপকথন চলতে থাকে আর জেসফার যখন তাকে প্রস্তাব দেন তখন তিনি জানতে পারেন ফাথিমা তার প্রস্তাবের অপেক্ষাই করছিল। ‘তারপর আমাদের কথাবার্তায় ভিন্ন রঙ সংযোজিত হয়। আমরা ভিডিয়ো কল শুরু করি।’ তিনি বিস্তারিতভাবে নিজের বিকলাঙ্গতার প্রবলতা বর্ণনা করেছিলেন কিন্তু তা ফাথিমার সিদ্ধান্তে কোনও বদল আনেনি।
           ২০১৫ সালের নভেম্বরে ফাথিমা তার ফ্লাইটের টিকিট কেটে নেয় এবং চলে যাওয়ার মাত্র দু’দিন আগে সে তার বাবা-মাকে নিজের পরিকল্পনার কথা জানায়। জেসফার তার কনের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ করেন যখন সে কালিকট বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ‘আমরা ৩০শে নভেম্বর বিয়ে করি এবং ফাথিমা সক্রিয়ভাবে ৩রা ডিসেম্বরের কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেছিল।’
           ২০১৮ সালে তাদের ছেলের জন্ম হয়। ফাথিমা, যিনি একজন প্রকাশিত কবি, ছেলের নাম কেনজাল রুমি ঠিক করেন। কল্পনা করুন বড় হয়ে কেনজাল বন্ধুদের নিজের অসাধারণ বাবা-মায়ের জীবনের কবিতা বর্ণনা করছে এবং তারা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছে!

ছবি:

ভিকি রয়