Icon to view photos in full screen

" মানছি যে অন্ধকার নিঃসীম, কিন্তু প্রদীপ জ্বালতে বাধা কে দিচ্ছে ? "

ইন্সটিটিউট অফ ব্লাইন্ড স্কুল থেকে পাশ করে চাকরি পাবার পর পুরনো ছাত্ররা যখন স্যারকে সম্মান জানাতে মিষ্টি হাতে নিয়ে দেখা করতে আসে, তখন জগন্নাথ সিং-এর মনে হয় এগুলোই তার সেরা পুরস্কার। মনে পড়ে যায়, উত্তরাখন্ডের এক সামান্য স্কুলের ছেলে চন্ডীগড়ের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়ে ওঠার যাত্রাপথের কথা।
 
পাহাড়-ঘেরা গাড়োয়াল জেলার পুরোলার কাছাকাছি এক গ্রামে ১৯৬৩ সালে জগন্নাথের জন্ম। ছ'মাস বয়েসে, যক্ষা রোগে মারা যান ওঁর মা। ঠাকুমা এবং বাবা বড় করে তোলেন জগন্নাথকে। পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবার উৎসাহ ভীষণ ভাবে দিতেন এঁরা। চোখের সমস্যা শুরু থেকেই ছিল জগন্নাথের। যখন সে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে তখন চোখে প্রায় কিছুই দেখতে পেত না। বাধ্য হয়ে বইয়ের পুরো অধ্যায়ই স্মৃতিতে ধরে রাখার চেষ্টা করত জগন্নাথ। এখনো আর্দ্রকণ্ঠে শিক্ষকদের কথা স্মরণ করেন জগন্নাথ। তাদের সহানুভূতিপরায়ণ মনোভাব জীবনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে ওঁকে। ঠিক ততটাই সাহায্য করেছে বন্ধুদের সাহচর্য। অক্ষমতার কারণে কখনও দূরে সরিয়ে দেয়নি তারা। "ভলিবল খেলার সময় যেহেতু আমি বল ঠিক কোথায় ভাসছে বুঝতে পারতাম না, আমার বন্ধুরা বল আমাকে ধরিয়ে দিত।" 
 
দুটো বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রি করেছেন জগন্নাথ, ইংরেজি এবং এডুকেশন। এরপরে এডুকেশন নিয়ে একটা স্পেশাল ডিপ্লোমা কোর্সও করেছেন। চন্ডীগড়ে চলে যাবার আগে দেরাদুনের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর দ্য ভিসুয়ালি হ্যান্ডিক্যাপড( National Institute for the Visually Handicapped) -এ কিছুদিন পড়িয়েছেন তিনি। ওঁর গুরুজি, অধ্যাপক রঘুরাজ সিং-এর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে জগন্নাথ বলেন, ওর জীবনের চলার পথে গুরুজি পরম উৎসাহদাতা। দৃষ্টিশক্তিহীন অন্যান্য ছাত্রদের লেখাপড়ার মান বাড়াতেও সাহায্য করেছেন অধ্যাপক রঘুরাজ সিং। স্বাধীনভাবে কিছু করার ইচ্ছেকে মনের মধ্যে চিরকালই পোষণ করে এসেছেন জগন্নাথ এবং সে কারণেই অন্যদের কাছে আদর্শ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছেন। হিন্দিতে তিনি একটা কবিতা বলেন যার তর্জমা করলে এরকম দাঁড়ায়: " এমন কাজ করো যা তোমার নিজস্ব পরিচিতি তৈরি করে, এমনভাবে হাঁটো যা তোমার পায়ের ছাপ ফেলে যায়, এমনভাবে বাঁচো যা এক পরম্পরা সৃষ্টি করে।" 
 
বলতে গেলে কবিতা ব্যাপারটা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আসে জগন্নাথের। ওঁর স্ত্রীর কথায়, চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই কবিতা তৈরি হয়ে যায় ওর মাথায়। একটা ইংরেজি কবিতায় উনি লিখছেন, " I have three lovely daughters, There names are Sweety, Pretty and Beauty, They live in UT ( Union Territory i.e. Chandigarh), To look after them is my duty. ছড়াটা শেষ হচ্ছে এভাবে-- " My better half is old but still very cutie! " 
 
ছন্দ মিলিয়ে ছড়া বলার বা লেখার সুফল ওঁর ছাত্ররাও পায়। উনি তাদের বলেন, নীতি প্রীতি আর সরস্বতী তে মন দিতে। মূল্যবোধ, অমায়িক ব্যবহার এবং বিদ্যা -- এই হল সুন্দর জীবনের চাবিকাঠি। জগন্নাথ সিং জয়ারা বিশ্বাস করেন প্রত্যকেরই আনন্দের ব্যাপারি হওয়া উচিত। কারণ যত আনন্দ ফেরি করা যায়, সে সম্পদ বহুগুণ হয়ে নিজের কাছেই ফেরত আসে।

ছবি:

ভিকি রয়