Icon to view photos in full screen

“আমি একটা ভালো চাকরি পাওয়ার, ভালো রোজগার করার স্বপ্ন দেখি”

ইসরানা (১৮) টিভিতে দেখা বলিউডের নাচগুলি অনুকরণ করতে পছন্দ করে। যদিও সে বাঁ কানে বধির এবং ডানদিকে তার আংশিক শ্রবণশক্তি রয়েছে, তবে কীভাবে 'দিদি' (বোন) শুচি দাশমানা গানে হাততালি দেয় আর তা দেখে সে নাচের তাল বুঝে নেয়। “ইংলিশ মিডিয়াম” ছবির “নাচন নু জী কারদা” গানে রাধিকা মদনের লাফঝাঁপ ও আবর্তন ইসরানা তার ছিপছিপে শরীর নিয়ে অনুকরণ করে এবং তার প্রিয় বন্ধু শবনম পাশ থেকে তাকে উৎসাহ দেয়। 

তার সম্পর্কে জিগ্যেস করলে সে দোভাষী শুচির মাধ্যমে বলেছিল, “আমার একটা বাড়ি পর্যন্ত নেই”। নয়া দিল্লিতে সালাম বালক ট্রাস্টের (SBT) মেয়েদের জন্য যে ‘উড়ান রোজ হোম’— শুচি সেই একমাত্র বাড়ি সামলায় যা ইসরানা তার নিজের বলে দাবি করে। তিন বছর আগে গুরুগ্রামের ওয়াজিরাবাদের আন্তঃরাজ্য বাস টার্মিনালের কাছে পুলিশ তাকে খুঁজে পায় এবং তারা তাকে ১ জানুয়ারী ২০১৮ তারিখে এসবিটিতে নিয়ে আসে। সে তার নিজের নাম ‘ইসরানা’ এবং তার বাবা ‘পালে’-এর নাম লিখতে পেরেছিল, কিন্তু তার জন্ম তারিখ ছাড়া অন্য আর কোনও তথ্য দিতে পারেনি। পরে মূকাভিনয়ের মাধ্যমে ইসরানা জানিয়েছিল যে, সে একধরনের পারিবারিক হিংসার শিকার হয়েছে এবং যেখান থেকে এসেছিল সেখানে সে ফিরে যেতে চায় না।

যখন আমরা তাকে তার পরিবার সম্পর্কে জিগ্যেস করেছিলাম, সে আমাদের উত্তর দিয়েছিল যে–“আমার মনে নেই” এবং যখন আমরা ওয়াজিরাবাদ বাস টার্মিনালে তাকে কে নিয়ে গিয়েছিল তা জানতে চেয়েছিলাম, তখন সে বলেছিল- “বাস ড্রাইভার”। সে আরও বলেছিল, “আমি একা বাড়ি ছেড়েছিলাম, নীরবে, ভোর ৫টায়”। সে দৃশ্যত একটি বাসে উঠেছিল যেটি দিল্লির দিকে যাচ্ছিল। ইসরানা বলেছিল যে, সে প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে কিন্তু সে তার স্কুলের নাম মনে করতে পারেনি। মনে হচ্ছিল যেন সে নিজের অতীতকে পিছনে ঠেলে দিতে চায়।

ইসরানা এখনও ভারতীয় সাংকেতিক (সাইন) ভাষায় (আইএসএল) দক্ষ নয়। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসবিটি (SBT) তাকে নয়ডা ডেফ সোসাইটিতে ভর্তি করেছিল। কিন্তু ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারীতে তার পড়াশুনায় বাধা পড়ে। ২০২১ সালের এপ্রিলে স্কুলটি আবার চালু হয় কিন্তু মে মাসে বন্ধ হয়ে যায়। এসবিটি তার জন্য একটি বিশেষভাবে সক্ষম শংসাপত্রের জন্য আবেদন করেছে যাতে সে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে এবং মুক্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। শুচি বলে, “ও বুদ্ধিমতী, এবং একজন প্রখর পর্যবেক্ষক”৷

যেহেতু তার স্কুল বন্ধ আছে, ইসরানা টিভি দেখে এবং মজার দৃশ্যে হেসে নিজের সময় কাটায়, বা হেডফোন দিয়ে গান শুনে কাটায়। আর অন্য কোনও শখ? “খাওয়াদাওয়া!”—সে বলে ওঠে। তার কোনও বিশেষ পছন্দ নেই: “আমি সবকিছু খেতে পছন্দ করি।” যেহেতু তার শরীর শক্তসমর্থ, তাই এসবিটি তার তরফে হাউসকিপিং চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় আবেদন পাঠিয়েছে। যাইহোক, একবার ইসরানা আইএসএল-এ সম্পূর্ণ দক্ষ হয়ে উঠলে, একবার তার পড়াশুনো ঠিকভাবে এগোলে, সে যে কতদূর যেতে পারে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
 
ইসরানার গল্প এখনো শেষ হয়নি...


ছবি:

ভিকি রয়