Icon to view photos in full screen

"আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাড়ি কামাই যদিও চোখে দেখতে পাই না।"

ছয়গাঁও- এর গোবিন্দ মজুমদার ভালোবাসে বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে তার প্রিয় চায়ের দোকানে যেতে আর ফেরার পথে ভাইঝিদের জন্যে মিষ্টি কিনে আনতে। ব্যাপারটা মোটেই কিছুই অস্বাভাবিক নয় যদিও গোবিন্দ সম্পূর্ণ অন্ধ,  বোবা এবং কালা।
 
আসামের কামরূপ জেলার ৩৭ বছরের গোবিন্দ তার গ্রামের কোণা কোণা হাতের তালুর মতো চেনে -- যে হাতের মুদ্রা এবং স্পর্শই তার একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। জন্ম থেকেই বোবা-কালা গোবিন্দ। দু বছর বয়েসে রুবেলা নামক অসুখে দৃষ্টিশক্তিও হারায় সে। ওই বয়েস পর্যন্ত সে পৃথিবীর যেটুকু দেখেছিল, সেটুকু স্মৃতিই তার সম্পদ হয়ে থেকে গেছে। ভাগ্য ভালো, গুয়াহাটির শিশু সারথি স্কুলের ' স্পর্শ ' নামক বিভাগের ছোঁয়া পেয়েছিল গোবিন্দ। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্ধ-কালাদের একমাত্র আঞ্চলিক তথ্যকেন্দ্র এটি। এই সাক্ষাৎকারের দোভাষী ছিলেন গোবিন্দর শিক্ষক মেহেবুবার রহমান। 
 
পাঁচ ভাইবোনের সবার বড় গোবিন্দ তার মা এবং বিবাহিত এক ভাইয়ের সঙ্গে থাকলেও সে ভীষণ ভাবে স্বাধীন। গোবিন্দর বাবা বছর সাতেক আগে মারা যান। বেঁচে থাকাকালীন উনি হাতে ধরে চাষবাসের সব রকম পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়ে গেছিলেন গোবিন্দকে। পারিবারিক দু একর জমিতে গোবিন্দ ধান, সর্ষে চাষ করে সঙ্গে গরু বাছুরের দেখাশোনা করে। খামারের পড়ে থাকা জিনিসপত্র দিয়ে নানান জিনিস বানায় গোবিন্দ। যেমন বাঁশের কঞ্চি দিয়ে দরজা, পাটের দড়ি, নারকোল ঝাড়ু ইত্যাদি। এই সব সামগ্রী বাজারে বিক্রি করে সে।
 
নিজের ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে গোবিন্দ। "আমার জামাকাপড় সুটকেসে ভরে রাখি যাতে আমার ভাই সেগুলো নিতে না পারে ।" নিরামিষ খাবারই ওর পছন্দ কারণ, " মুরগির মাংস আমার পাকস্থলীর বারোটা বাজিয়ে দেয়।" এমন কি কিছু আছে যাতে সে ভয় পায়? "গভীর জল।" গাড়িঘোড়াও ওর পছন্দ নয়। যদিও মেহেবুবারের স্কুটারের পেছনে বসে যেতে গোবিন্দর ভালো লাগে।
 
অচেনা কেউ তার কাছে গেলে দুটো প্রশ্ন করে গোবিন্দ। " কোন পথে এসেছ?" কারণ ও জানে কোন রাস্তা ধরে এলে কম সময়ে আসা যাবে আর তাড়াতাড়ি হবে। আর একটা প্রশ্ন হল , "বিয়ে করেছ? " গোবিন্দর খুব ইচ্ছে বিয়ে করে। "আমার ছোট ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে তাহলে আমার কেন হবে না?" বলে গোবিন্দ। "দু লাখ টাকা পেলে আমি একটা দোকান খুলে পুজোর সামগ্রী বিক্রি করতাম। "মেহেবুবার মনে করেন, গোবিন্দর আর্থিক অবস্থা সুরক্ষিত থাকলে গ্রামের কেউ না কেউ তার মেয়েকে ওর সঙ্গে বিয়ে দিত। 
 
ফটোগ্রাফার ভিকি রয় যখন গোবিন্দর কাছে গেছিলেন তখন সে হাত দিয়ে ক্যামেরার ভঙ্গি করে ' ক্লিক ' করে ছবি তুলেছিল। হাসিখুশি, কৌতুহলী, করিৎকর্মা -- এই হল আমাদের গোবিন্দ। 
 



ছবি:

ভিকি রয়