Icon to view photos in full screen

“আমি আমার মাকে খুব ভালোবাসি। আমি যা যা করতে পারি না,সেগুলো আমার জন্য মা সব করে দেয়।”

২০২০ সালের বিশ্বব্যাপী মহামারির সময়, বড় বড় শহর থেকে নিজের নিজের শহরে এবং গ্রামে ফিরে যাওয়া লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের মধ্যে একজন ছিলেন অজিত দুসাদ (২৬)। ২০১৮ সালে সে একটি বিরিয়ানি আউটলেটে ডেলিভারি বয়ের কাজ করার জন্য আসামের কাছাড় জেলার ছোটো দুধপাটি গ্রাম থেকে বেঙ্গালুরু পর্যন্ত রওনা দিয়েছিল। তার বড় ভাই বাবুল(৩০) এর একাধিক প্রতিবন্ধকতা ছিল তাই তার দেখাশোনার জন্য মা এর সাহায্য করা অজিতের তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার একটি জরুরি কারণ হয়ে উঠেছিল। অজিত বেঙ্গালুরুতে থাকাকালীন একবার বাবুল মারাত্মকভাবে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। তখন তার মা একাই সব সামলেছিলেন। কিন্তু তাতে তিনি সম্পূর্ণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তার ওপর মহামারির বিধিনিষেধ আরও বাড়ায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছিল। তাই সত্যিই তার কারোর সাহায্যের খুব প্রয়োজন হয়ে উঠেছিল।
পরিবারের ছোটো ছেলে হয়েও মাত্র নবম শ্রেণির পড়াশোনা শেষ করার পরেই অজিত পরিবারের প্রধান উপার্জনকারীর ভূমিকা নেয় । অজিতের বাবা হরিহর দুসাদ (৭০) আগে সাইকেল-রিকশা চালাতেন, কিন্তু বয়সের ভারে এখন আর সেই কাজ করতে পারেন না। তাদের মা ও বাড়তি রোজগারের জন্য সড়ক নির্মাণের মতো দৈনিক মজুরির কাজে যেতেন; কিন্তু বাবুলের প্রতিবন্ধকতার কারণে তিনি পুরো সময় বাড়িতে থাকতে বাধ্য হন।
বাবুল ছোটো থেকেই অনেক দুর্বল এবং অসুস্থ ছিল। তার বাবা-মা কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারেন যে ছেলের মধ্যে “কিছু সমস্যা” রয়েছে। তারা তাকে অনেক ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় তাদের কাছে পুঁথিগত শিক্ষা না থাকায় কোনো ডাক্তারই তাদের পরিষ্কার করে কিছু বোঝাননি। শুধু বলেছেন, “কিছু করার নেই, যেমন আছে তেমনই থাকবে।” কিন্তু এই “তেমন” কী ব্যাপার, তা কখনো জানানো হয়নি।
বাবুলের মানসিক প্রতিবন্ধকতা, কথা বলা ও বোঝার সমস্যা, এবং চলাফেরার সমস্যা আছে বলে মনে হয়। “তার ডান হাত পুরোপুরি খোলে না, আর ডান পা ও একটু বেঁকে আছে,” অজিত আমাদের বলে। “সে খুব বেশি বুঝতে পারে না, এবং স্পষ্টভাবে কথা বলতেও পারে না; শুধু নিজের নাম বলতে শিখেছে। তবে সে সারাজীবন একটি কথাই বলেছে—‘মা’। সারাক্ষণ শুধু ‘মা, মা’। আমার মা-ই তার জীবন।” অজিত আরও বলে, রাতে সবসময় কাওকে না কাওকে বাবুলের পাশে ঘুমোতে হয় কারণ কখনো কখনো তার “শরীর শক্ত হয়ে যায়” (সম্ভবত খিঁচুনি), এবং তখনই তাকে “ওষুধ” দিতে হয়।
বসন্তী জানান, বাবুলের প্রতিবন্ধী প্রমাণপত্র রয়েছে এবং সে মাসে ২,০০০ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। “সে কিছু করে না, শুধু সারাদিন বসে থাকে,” বলেন তিনি। “আমি সকালে উঠে রান্না করি, আর সারাদিন বাবুলের দেখাশোনা করি। যখন আমি গরুর জন্য ঘাস কাটতে বাইরে যাই, তখন আমার স্বামী তার খেয়াল রাখে।”
অজিত বলে, তার ভাই এর যে হাতটি ভালো আছে সেই হাত দিয়ে নিজের কিছু সামান্য প্রয়োজনগুলো কোনো রকমে সামলে নিতে পারে। সে বলে “আমি শুধু তার ভাই নই, তার একমাত্র বন্ধু,” । “এখানে কাছাড়ে আমি একটি ছোট্ট দোকান খুলেছি, যেখানে মোবাইল কভার, হেডফোন আর অন্যান্য জিনিস বিক্রি করি। যা আয় হয়, তাই দিয়েই আমরা সংসার চালাই।”
যে পরিবার শুধু বেঁচে থাকার জন্যই লড়াই করে, তাদের ভবিষ্যতের স্বপ্নও স্বাভাবিকভাবেই সীমিত হয়। দুসাদ পরিবারও তার ব্যতিক্রম নয়। অজিত বলে, তিনি শুধু সংসারটা চালিয়ে যেতে চায়। আর বসন্তী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, “অনেক স্বপ্ন ছিল, এখনো আছে, কিন্তু কী লাভ? কিছুই তো বাস্তবে হয়ত হবে না। এখন শুধু চিন্তা হয়—আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী হবে…”

ছবি:

ভিকি রয়