Icon to view photos in full screen

“পূর্বে বিকলাঙ্গতা আমার দুর্বলতা ছিল, কিন্তু এখন এটাই আমার শক্তি।’’

আজকের উৎফুল্ল, প্রাণবন্ত আশে কিবার সঙ্গে পরিচয় হলে আপনি কখনোই বুঝবেন না ছোটবেলায় সে কতটা মারাত্মক লাজুক ছিল। তার রাজ্যের মানুষজন, যার মধ্যে অকুলুটোর কিছু বাসিন্দাও আছে, যারা বিশ্বাস করত আশে অভিশপ্ত; কারণ তার হাতগুলি ছিল অপেক্ষাকৃত খাটো, আঙ্গুলগুলিও স্বাভাবিকের থেকে সংখ্যায় কম আর ছোট। একদিন সে যখন ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনছিল দোকানের মালিক ফেরতের পয়সা তার দিকে ছুড়ে দেয়।
 
           ছোট্ট আশে চেয়েছিল সিন্ড্রেলার মতো তারও একজন রূপকথার পরী থাকুক যে তার হাতগুলো স্বাভাবিক করে দেবে। সে সবসময় পঞ্চোর ভিতরে হাত লুকিয়ে রাখত। যদিও সে ভীষণ ভাবে চাইত স্কুলে খেলাধূলা করতে, বিশেষ করে ভলিবল, তবুও সে দর্শকই থেকে যেত। সে দুপুরের খাবার এড়িয়ে যেত এই ভেবে যে, যখন সে খাবারের পাত্র খুলবে তখন বাচ্চারা তার হাতের দিকে চেয়ে থাকবে। বিভিন্ন সামাজিক সমাবেশও সে এই একই কারণে এড়িয়ে চলত।
 
           শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের নিগ্রহ তাকে হতাশার দিকে ঠেলে দিয়েছিল, এমনকী সে আত্মহত্যার পরিকল্পনাও করত। হাইস্কুলের পরে সে পাঁচ বছর বিরতি নেয়। কিন্তু মা ইয়েহোলি সুকো’র কথাটি তার কানে বেজে যাচ্ছিল —“শিক্ষা ছাড়া তুমি কিছুই করতে পারবে না।” ডিম্পুরের প্রভানন্দ মহিলা কলেজ থেকে সে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক হয়।
 
           আশে হয়তো আত্মগ্লানি ও তিক্ততায় ডুবে যেত যদি না তার জীবনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটত। খেহুতো গ্রামের ছাত্র-ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে তার নাম বিবেচিত হয়। ইউনিয়ন-সভায় এক চাচা ঘোষণা করেছিলেন যে, যদি আশে নির্বাচিত হয় তাহলে গ্রামের পক্ষে তা লজ্জাজনক, কারণ সে “প্রতিবন্ধী এবং একজন মহিলা”। সেটাই ছিল সহ্যের শেষ সীমা। পয়লা জানুয়ারি ২০১৫-তে আশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল যে, সে তার অধিকারের পক্ষে দাঁড়াবে এবং নির্বাক গণপূর্ত বিভাগের (PWD−Public Works Department) মুখস্বরূপ হবে।
 
           ক্রমেই সে তার কুণ্ঠা কাটিয়ে সাহস অর্জন করতে লাগল। নাগাল্যান্ড রাজ্য প্রতিবন্ধী ফোরাম (এনএসডিএফ) তাকে গুয়াহাটিতে পিডাব্লিউডির জন্য একটি সেমিনারে অংশ নিতে পাঠিয়েছিল। তারপরে ২০১৭ সালে পাঁচগণীতে টাটা স্টিলের উপজাতি নেতৃত্ব কর্মসূচীতে প্রথমবারের মতো মঞ্চে নিজের জীবনের কাহিনি শুনিয়েছিল আশে। যখন ২০১৮ সালে টিএলপি-তে সে আবার ভাষণ দিল তখন প্রথমবারের মতো সে নিজের হাতদুটোকে অনাবৃত করল।
 
           এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের পর তার দৃঢ়তা বেড়েই চলল। আজ আশে এনএসডিএফের সাধারণ সম্পাদক এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধী সংস্থার দায়িত্বশীল পদেও রয়েছে। অবসর সময়ে আশে ডিজনির রূপকথা-গল্প দেখতে ভালোবাসে, আক্সন দিয়ে ধূমায়িত শূকরের মাংস রান্না করে, স্থানীয় অ্যাপলোনো গসপেল ব্যাণ্ড শোনে আর নিজের মননের সঙ্গে মেলে এমন বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়।
 
           “দৃঢ় এবং নির্ভীক হও”, সমস্ত পিডব্লিউডি-র কাছে এটিই তার বার্তা। “আমাদের অবশ্যই নিজেদের অনন্যতাকে মানতে হবে। আমরা যেন নিজেদের আড়াল না করি।”

ছবি:

ভিকি রয়