আগস্ট ২০২২-এ, অরবিন্দ কুমার মিশ্র তার জন্মস্থান কানপুর থেকে ছিত্রকূট যাচ্ছিলেন। তিনি ট্রেনের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন হঠাৎ ভারসাম্য হারিয়ে রেললাইনে পড়ে যান। দুর্ঘটনায় তিনি দুই পা হারান। ৪১ বছর বয়সী অরবিন্দ জানান, কীভাবে তার স্থিতিশীল জীবন সম্পূর্ণ ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল।
চার সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট অরবিন্দ স্কুলজীবনে পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলেন এবং দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করার পর থেকেই টিউশন নিতে শুরু করেন। স্নাতকোত্তর শেষে তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন এবং তাতে অসাধারণ দক্ষতা দেখান। তিনি কর্মযোগী বিদ্যানিকেতন-এর ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন এবং স্থানীয় বিধায়ক অজয় কাপুর ও শিক্ষক সমিতির কাছ থেকে তার শিক্ষকতার দক্ষতার জন্য সম্মানিত হয়েছিলেন। স্ত্রী শিবানী, যিনি নিজেও শিক্ষিকা, এবং ছেলে যতার্থকে নিয়ে তিনি একটি “স্বাভাবিক মধ্যবিত্ত জীবন” কাটাতেন।
দুর্ঘটনাটি তার জীবনে ভূমিকম্পের মতো হলেও অরবিন্দের মনোবলকে থামাতে পারেনি। তিনি বলেন, “আমার ইচ্ছাশক্তি খুবই জোরালো এবং আত্মবিশ্বাসও প্রবল। হাসপাতালে শুয়ে থাকা অবস্থায় আমার একটাই চিন্তা ছিল—এবার কী? কীভাবে এখান থেকে বের হব? কীভাবে নিজেকে পুনর্বাসিত করব?” তিনি সিদ্ধান্ত নেন কৃত্রিম পা লাগানোর। কৃত্রিম পা লাগানোর উপযুক্ত কি না তা নিয়ে বহু দেরি ও বিভ্রান্তির পর, অবশেষে স্থানীয় বিজেপি ইউনিটের সভাপতি অনুপম মিশ্রের সাহায্যে তিনি কৃত্রিম পা লাগাতে সক্ষম হন।
এমনকি তার চিকিৎসাজনিত সমস্যাগুলোই যথেষ্ট ছিল না, অরবিন্দকে এরপর পড়তে হয়েছিল দপ্তরের জটিল ফাঁদে। ভারতীয় রেল আইনে রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও আহত হলে ক্ষতিপূরণের বিধান আছে। কিন্তু অরবিন্দ এখনো পর্যন্ত কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। এদিকে তার বাবা মারা গেছেন (তার মা মারা গিয়েছিলেন ২০ বছর আগে) এবং তিনি বাবার পেনশন নিজের নামে করাতে এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে ছুটে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, “কর্তৃপক্ষ বারবার এই ফাইল, সেই ফাইল চাইছে, এবং আমাকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘোরাচ্ছে।”
অরবিন্দ বলেন, তিনি অন্যের উপর নির্ভর না করে নিজের সব কাজ নিজেই করতে পারেন; কৃত্রিম পা ছাড়াও তার কাছে একটি হুইলচেয়ার এবং একটি প্রতিবন্ধী ট্রাইসাইকেল রয়েছে। কিন্তু তার সমস্ত শক্তি পেনশন ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার চেষ্টা করতেই খরচ হয়ে যাচ্ছে, আর তিনি বিশ্রাম বা বিনোদনের সময় উপভোগ করতে পারছেন না—যদিও তিনি বলেন যে তিনি মহম্মদ রফির গান শুনতে ভালোবাসেন। যখন তিনি সরকারি দপ্তরের ঝামেলা থেকে দূরে থাকেন, তখন বাড়িতে একা থাকেন, আর শিবানী একটি বেসরকারি স্কুলে পড়াতে যান এবং যতার্থ দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে l দুর্ঘটনার আগে, কোভিড মহামারির সময় যখন স্কুল বন্ধ ছিল, তিনি “ইংলিশ উইথ অরবিন্দ মিশ্র” নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করেছিলেন।
আজকাল, যখন তার হাতে কিছুটা সময় থাকে, তিনি আশেপাশের বাচ্চাদের পড়ান। একবার শিক্ষকতা রক্তে মিশে গেলে, তা ছাড়া বড়ই কঠিন!