Icon to view photos in full screen

" যে মুহূর্তে আমার অক্ষমতাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করলাম সেই মুহূর্ত থেকেই আমার স্বপ্ন সফল করার দৌড় শুরু হল।"

অঞ্জলি সানি(২৬), কান্নুর জেলার শ্রীকন্দপুরমে থাকে। যখন ও কিন্ডারগার্টেনে পড়ত তখন নাচের ক্লাস থাকলেই পায়ে ব্যথা করছে বলে নালিশ করত। ওর অভিভাবকরা এবং শিক্ষিকারা ভাবতেন ফাঁকি দেবার জন্যই বোধহয় ছোট্ট অঞ্জলি পায়ে ব্যথার বাহানা করছে। যখন অঞ্জলি ক্লাস ফোরে উঠেছে, তখন কোনো একজন শিক্ষিকার মনে সন্দেহ জাগে যে কোথাও কিছু একটা গোলমাল আছে। উনি তখন বাড়ির লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেন। পরীক্ষায় ধরা পড়ে অঞ্জলির পেশীর অসুখ যাকে মাসকুলার ডিসট্রফি বলে, সেটা জন্মগতভাবেই ওর আছে। যত বয়েস বাড়বে, পেশীগুলো দুর্বল হতে থাকবে।

স্কুলে পড়াকালীনই অঞ্জলির পেশীর অবস্থা এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়াল যে ও বাধ্য হল হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে। আর একটা ভয়ঙ্কর ধাক্কা এল ২০০৯ সালে। অঞ্জলির বাবা, যিনি ছিলেন ওর প্রধান চালিকাশক্তি, তিনি সেলিব্রাল স্ট্রোকে আক্রান্ত হলেন এবং তাঁর শরীরের বাঁদিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ল। এখন তিনি সম্পূর্ণভাবে অঞ্জলির মায়ের ওপর নির্ভরশীল। অঞ্জলির বন্ধু লিনি ( Linimol Anthony) স্কুল জীবনের মাঝামাঝি থেকে কলেজের পুরোটাই ওর প্রধান সহায় হয়ে থেকেছে। বারো ক্লাসের পর বাধ্য হয়ে এক বছর পড়া বন্ধ রাখতে হয়েছিল অঞ্জলিকে যার প্রধান কারণ ছিল পছন্দের কলেজে যাতায়াতের অসুবিধে। শেষ অবধি কাছাকাছির এক কলেজ থেকে বিবিএ আর এমকম করে অঞ্জলি। শিক্ষক শিক্ষিকারা খুবই সাহায্য করত ওকে। " আমার হেড অফ দ্য ডিপার্টমেন্ট যিনি ছিলেন, সেই স্যার নিজের খরচে একটা ইজিচেয়ার কিনে দিয়েছলেন যাতে ক্লাসে আমি স্বচ্ছন্দে বসতে পারি। "
 
এক বছরের যে খালি সময়টা ছিল তখন অঞ্জলি অনলাইনে গ্রাফিক ডিজাইনিং শিখে পরিবারের প্রত্যেকের জন্মদিন উল্লেক করে ক্যালেন্ডার ইত্যাদি বানাত। লিনি সেই সময় ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করছিল। ওর অ্যাক্রিলিক পেন্টের টিউবগুলো ঘরময় ছড়ানো থাকত। অঞ্জলি সেগুলো দিয়ে ক্যালেন্ডারের পাতার পেছনে সাদা অংশতে ছবি আঁকত। আত্মবিশ্বাস অর্জন করে ক্যানভাসে আঁকার দিকে ঝোঁকে অঞ্জলি। এই ব্যাপারে ওর মা আঁকার সাজ সরঞ্জাম কিনে দেওয়া থেকে যা যা প্রয়োজন, সব রকম সাহায্য করে 
ওকে।

অঞ্জলি শিখেছে, নিজের অক্ষমতা নিয়ে চর্চা করলে কষ্টই শুধু বাড়ে, কাজের কাজ কিছু হয় না। " আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি না, কেবল আজ আর কালকের কথা ভাবি। কম সময়ের মধ্যে হওয়া কাজই আমার লক্ষ্য।" অঞ্জলি বলে। কিশোরী বয়েসে বাড়িতে শিক্ষক রেখে কিবোর্ড বাজানো এবং কর্নাটক ঘরানার গান শিখেছে অঞ্জলি। পেশীগত সমস্যার কারণে কিবোর্ড বাজানো স্থগিত হলেও গানটা চালিয়ে গেছে ও। হাতে আঁকা যখন অসম্ভব হয়ে দাঁড়ালো তখন ডিজিটাল মাধ্যমে আঁকা শুরু করল অঞ্জলি। প্রথমে মোবাইলে আঁকত, পরে আইপ্যাডে। ইস্টাগ্রামে দিত সেই সব আঁকা। ২০১৮ থেকে বিপুল সাড়া পেতে শুরু করল অঞ্জলি। এখন ওর ভান্ডারে তিনশোরও বেশি আঁকা রয়েছে যেগুলো ওর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া আছে।

" যখনই কোনো সমস্যায় পড়ি, এ-র আগে যে সমস্ত জটিল সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি সেগুলোর কথা ভাবি।" অঞ্জলি বলে, " যতক্ষন নিজে না চাইছে ততক্ষণ কেউই অক্ষম নয়।" 

ছবি:

ভিকি রয়