Icon to view photos in full screen

" অভিভাবকদের উচিত তাদের বিশেষভাবে সক্ষম বাচ্চাদের বাইরের জগতে নিয়ে আসা যাতে তারা সমাজে সবার সঙ্গে মিশতে পারে।"

বেশিরভাগ সরকারি কর্মচারীরা বছরে যে ৩০ দিন ছুটি পান, সেই সময় তারা পরিবারকে নিয়ে বেড়াতে যান। কিন্তু আমীর সিদ্দিকির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। দিল্লিবাসী আমীর সকরারি কম্পিউটার অফিসার হিসেবে কর্মরত। ছুটি পেলেই সে শারীরিক অক্ষমতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে অভিযানে বেরিয়ে পড়ে। আমীরের বিশেষভাবে তৈরি স্কুটারের কিলোমিটার-কাঁটা এখনো পর্যন্ত ৫৩,০০০ কিলোমিটার পথ- চলা রেকর্ড করেছে। আমীরকে লোকে একটা বিশেষ নামে ডাকে, সেটা হল ' রাইডার আমীর ' ( Rider Ameer) । কখনো কখনো সে একা না ঘুরে দলের সঙ্গে ঘোরে। ওর দলের নাম ' দ্য ঈগল স্পেশালি এবেল্ড রাইডারস ' ( The Eagle Specially Abled Riders)। 
 
জীবনের বেশি সময়টাই জবলপুরে কাটিয়েছে আমীর। ১৮ মাস বয়েসে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয় সে। আমীরের বাবা কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ' ভারত সঞ্চার নিগম ' এর কর্মী ছিলেন। আমীরের কথায়, " বিশেষভাবে সক্ষম সন্তানকে ভালোবাসলেও অনেক সময়ই বাবা মা তাকে লোকসমক্ষে আনতে দ্বিধা করেন পাছে কেউ কোনো অপমানজনক মন্তব্য করে বসে। " বাকি চার ভাইবোনের থেকে কোনো অর্থেই বাবা মা আমীরকে আলাদা চোখে দেখতেন না। তাঁরা বিশ্বাস করতেন, আমীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হল শিক্ষা, যা তাকে আগামী দিনে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করবে। 
 
আমীর জবলপুর ইউনিভার্সিটি থেকে দুটো বিষয়ে এম এ পাশ করেছে-- কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন এবং বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এছাড়াও কম্পিউটার সায়েন্সে এম ফিল করেছে। এখন আমীর কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ওপর পিএইচ ডি করা ছাড়াও সোশাল ওয়ার্ক নিয়ে এম এ করছে। এত সাফল্য পেয়েও আমীর কিন্তু বসে থাকে না। অন্যান্য মানুষ, যাদের কোনো ধরনের অক্ষমতা আছে, তাদের মনোবল বাড়াতে নিরন্তর কাজ করে চলেছে সে। এই সব মানুষদের জন্য শিক্ষা কত জরুরি, সেই কথা বোঝানোই এই মুহূর্তে ওর একমাত্র উদ্দেশ্য।  
 
ছ' বছর আগে ভালো চাকরির উদ্দেশ্যে আমীর জবলপুর থেকে দিল্লি চলে যায়। সেই সময় অক্ষমতাযুক্ত মানুষদের জন্য তৈরি বিশেষ স্কুটার কেনে। তার পরপরই আমীর ঘুরে ঘুরে প্রচারের কাজ শুরু করে। বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের মধ্যে শিক্ষা সম্পর্কে সচেতনতার প্রচারে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ১৬ জন ঈগল রাইডার দিল্লি থেকে মুম্বই পর্যন্ত ১৪ টা শহর ধরে ধরে প্রায় ৩৫০০ কিলোমিটার পাড়ি দেয়। এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্যই ছিল, প্রত্যেক জায়গায় এক রাত্রি যাপন করে সেখানকার বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের জন্য যে সংগঠন আছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং সভার আয়োজন করা। সেই সভায় আমীর তার বক্তব্য রাখত এবং কীভাবে তারা মূল স্রোতের সঙ্গে মিশে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে সচেতন করত। তাদের প্রশ্নের উত্তরও দিত আমীর।
 
দিল্লিতে এই সমস্ত শারীরিক অক্ষমতাযুক্ত মানুষদের শংসাপত্র পেতে সাহায্য করে আমীর। এই অতিমারীর সময়ে ঈগল রাইডাররা খাবার, রেশন, টাকা, মাস্ক, স্যানিটাইজার সহ ওষুধ সরবরাহের কাজ করে চলেছে। 
 
ধর্ষণ মুক্ত ভারতবর্ষ চেয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে আমীর ৩০০০ কিলোমিটার ঘুরেছে যেটা একটা রেকর্ড। কোনো বিশেষভাবে সক্ষম মানুষ স্কুটার চালিয়ে একা ঘোরার এটাই সর্বোচ্চ দূরত্ব। এ বছরই পরবর্তী অভিযানের কথা ভাবনায় আছে ওর। আমীরের ইচ্ছে, নেপাল এবং ভুটানে চক্ষুদান সম্পর্কিত সচেতনতার প্রচারে ৪৫০০ কিলোমিটার পাড়ি দেবার। আমীর মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, চক্ষুদান মহা দান। 


ছবি:

ভিকি রয়